টলিউডবিনোদন

বিকল দুটো কিডনি, শারীরিক অবস্থা অত্যন্ত সঙ্কটজনক, ভেন্টিলেশনে রয়েছেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়

Advertisement

বর্ষীয়ান অভিনেতা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের শারীরিক অবস্থা ক্রমশ সঙ্কটজনক হচ্ছে। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, তাঁর দুটি কিডনি কাজ করছে না। এছাড়া তাঁর স্নায়ুও চিকিৎসায় সাড়া দিচ্ছে না। সোমবার বিকাল 3 টে নাগাদ তাঁকে ভেন্টিলেশনে দেওয়া হয়েছে। তাঁর শরীরে অক্সিজেনের মাত্রা এই মুহূর্তে যথেষ্ট কম। তাঁর শরীরে সোডিয়াম ও পটাশিয়াম লেভেলও অস্বাভাবিক রয়েছে। এছাড়া সৌমিত্রবাবুর রক্তে প্লেটলেটের পরিমাণ ক্রমশ কমছে। তাঁর রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রাও কমে গেছে। ফলে তাঁকে রক্ত দেওয়ার কথা ভাবা হচ্ছে। এছাড়া তাঁর শরীরে কোথাও আ‍ভ‍্যন্তরীণ রক্তক্ষরণ শুরু হয়েছে কিনা, তাও পরীক্ষা করা হচ্ছে। তবে তাঁর শরীরে প্রয়োগ করা জীবনদায়ী ওষুধের প্রতিক্রিয়ায় সৌমিত্রবাবুর শরীরে ডিহাইড্রেশন দেখা দিয়েছে। এর ফলে তাঁর শরীরে ইউরিয়া ও ক্রিয়েটিনিন-এর মাত্রা বেড়েছে যা তাঁর দুটি কিডনিকে বিকল করে দিয়েছে। এই মুহূর্তে সৌমিত্রবাবুকে কড়া পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে।

বেলভিউ নার্সিংহোম সূত্রে পাওয়া খবর অনুযায়ী, বর্ষীয়ান অভিনেতার পরিবারের অনুমতি নিয়ে গতকাল থেকেই তাঁর রেনাল রিপ্লেসমেন্ট থেরাপি শুরু করা হয়েছে। তবে এখনও অবধি কিডনি সচল করা যায়নি। চিকিৎসকরা প্রথমে ডায়ালিসিসের কথা ভাবলেও সৌমিত্রবাবুর দুটি কিডনি বিকল হয়ে যাওয়ার ফলে তাঁর পক্ষে ডায়ালিসিস লাভজনক হবে না বলে জানা গেছে। কিন্তু তাঁর সুস্থ হয়ে ওঠার পক্ষে সবচেয়ে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে তাঁর বয়স ও কো-মর্বিডিটির সমস্যা। সৌমিত্রবাবুর শরীরে একের পর এক উপসর্গ দেখা দিচ্ছে যা ক্রমশ জটিল আকার ধারণ করছে। এই মুহূর্তে পরিস্থিতি ক্রমশ নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে, বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।

গত 6 ই অক্টোবর করোনা সংক্রমণ নিয়ে বেলভিউ নার্সিংহোমে ভর্তি হন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। 2006 থেকে সিওপিডির সমস্যা থাকায় ও করোনা সংক্রমণের ফলে তাঁর শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। সিটি স্ক্যান করে তাঁর বুকে কিছু না পাওয়া গেলেও এমআরআই রিপোর্টে জানা যায় তাঁর মস্তিষ্ক ও ফুসফুসের সংক্রমণ শুরু হয়েছে। তাঁর শরীরে পুরানো ক্যান্সার ফিরে আসার কারণে তা ক্রমশ ছড়িয়ে পড়ছে তাঁর ফুসফুস ও মস্তিষ্কে। এছাড়া তাঁর মূত্রথলিতে সংক্রমণ ধরা পড়ে। সৌমিত্রবাবুর জন্য গঠিত হয় 16 জন চিকিৎসকদের বিশেষ একটি টিম। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের পরামর্শ অনুযায়ী সৌমিত্রবাবুর শরীরে দুই বার প্লাজমা থেরাপি করা হয়। কিন্তু প্লাজমা থেরাপির ফলে তাঁর তেমন কোন উন্নতি হয়নি। একসময় তাঁর শরীরে অক্সিজেনের মাত্রা কমতে থাকে ও কার্বন-ডাই-অক্সাইডের মাত্রা বাড়তে থাকে। তাঁর শরীরে সোডিয়াম ও পটাশিয়াম লেভেল অস্বাভাবিক হয়ে যায়। তাঁর করোনা এনসেফ্যালাইটিস দেখা দেয়। ফলে তাঁর শরীরে অস্থিরতা দেখা দেয়। এছাড়া তাঁর স্নায়বিক সমস্যা বেড়ে যায়। তাঁকে বাইপ‍্যাপ ভেন্টিলেশন সাপোর্ট দেওয়া হয়। সৌমিত্রবাবুর মস্তিষ্ক সূচক 6-এ নেমে যায়। তিনি তন্দ্রাচ্ছন্ন হয়ে যান। এইসময় তাঁর করোনা রিপোর্ট নেগেটিভ আসে। তাঁর শরীরে অ্যান্টিবায়োটিক প্রয়োগ করা শুরু করেন চিকিৎসকরা। সৌমিত্রবাবুর শারীরিক অবস্থা ক্রমশ স্থিতিশীল হতে শুরু করে। তাঁর আচ্ছন্নভাব অনেকটা কেটে যায়। সৌমিত্রবাবুর শরীরে অক্সিজেনের মাত্রা স্বাভাবিক হতে শুরু করে।

তাঁর শরীরে সোডিয়াম ও পটাশিয়াম লেভেল ক্রমশ স্বাভাবিক হতে থাকে। কিন্তু তাঁর শারীরিক দুর্বলতার কারণে তিনি উঠে বসতে পারছিলেন না। তিনি কথা বলতে বা মুখ দিয়ে খেতে পারছিলেন না। ফলে তাঁকে রাইলস টিউবের মাধ্যমে খাওয়ানো হচ্ছিল। সৌমিত্রবাবুর ফিজিওথেরাপি ও স্পিচ থেরাপির চেষ্টা করা হলেও তেমন লাভ হয়নি। কিন্তু তাঁর বয়সের কারণে তাঁর শরীরে স্টেরয়েডের ডোজ কমানোর ফলে তাঁর শারীরিক অবস্থার ফের অবনতি হতে শুরু করে। সৌমিত্রবাবুর স্নায়বিক সমস্যা জটিল আকার ধারণ করে। তাঁর জন্য গঠিত মেডিক্যাল টিমে নতুন করে পাঁচ জন স্নায়ু বিশেষজ্ঞকে যুক্ত করা হয়। এছাড়া আন্তর্জাতিক ও দেশ এবং রাজ্যের বিশিষ্ট স্নায়ু বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নেওয়া হয়। কিন্তু এই মুহূর্তে পরিস্থিতি ক্রমশ নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে চলে যাচ্ছে। ফলে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের পরামর্শ অনুযায়ী সৌমিত্রবাবুর শরীরে প্লাজমাফেরেসিস করার সিদ্ধান্ত আপাতত স্থগিত রাখা হয়েছে। তাঁর পরিবারেরও কাউন্সেলিং করা হচ্ছে। মুম্বই থেকে অভিনেতা অমিতাভ বচ্চন সৌমিত্রবাবুর দ্রুত আরোগ্য কামনা করে বার্তা দিয়েছেন। অপরদিকে সৌমিত্রবাবুর আইসিইউ ও ভেন্টিলেশনের কিছু ছবি সাইবার দুনিয়ায় অনৈতিক ভাবে ছড়িয়ে পড়ার কারণে তাঁর কন্যা পৌলমী সোশ্যাল মিডিয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন ও অভিনেতার ব্যক্তিগত পরিসর লঙ্ঘন ও মর্যাদাহানি না করার অনুরোধ করেন।

Related Articles

Back to top button