কলকাতা: বিগত কয়েকদিন ধরেই ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের সভাপতি সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের (Sourav Ganguly) রাজনীতিতে পা রাখা নিয়ে গোটা দেশ জুড়েই চলছে তর্ক-বিতর্ক। মহারাজের সাম্প্রতিক বেশ কিছু কাজকর্ম সেই জল্পনাকে আরও কিছুটা উসকে দিয়েছে। তা সে, রাজভবনে (Rajbhaban) গিয়ে রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড়ের (Jagdeep Dhankar) সঙ্গে ‘সৌজন্যমূলক’ সাক্ষাৎ হোক কিংবা আমেদাবাদে সৌরভকে দেখতে স্বয়ং কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের ছেলে ছুটে আসা। সব মিলিয়ে যেন একটা রাজনৈতিক সমীকরণ তৈরী হচ্ছিল। এরই মাঝে হৃদরোগে আক্রান্ত হলেন ভারতীয় ক্রিকেট দলের প্রাক্তন অধিনায়ক। এখন প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে যে সৌরভ সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরলেও তিনি বাংলার রাজনীতির চাপ কতটা সামলাতে পারবেন?
আজ সৌরভের মেডিক্যাল রিপোর্ট পর্যবেক্ষণ করতে বেঙ্গালুরু থেকে চাটার্ড বিমানে কলকাতা আসেন হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ দেবী শেঠি। তিনি সব রিপোর্ট খুঁটিয়ে দেখার পর জানান, আগামীকালই মহারাজকে হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেওয়া হবে। তিনি এখন একেবারেই সুস্থ। চাইলে ক্রিকেটও খেলতে পারেন। সেইসঙ্গে দেবী শেঠি খানিক মজা করেই বলেন, সৌরভের হার্ট এখনও ২০ বছরের যুবকের মতোই তরতাজা রয়েছে। চাইলে উনি ম্যারাথনেও দৌড়তে পারবেন।
ঠিক এইসময় সাংবাদিকে থেকে প্রশ্ন উড়ে আসে যে তবে কী সুস্থ হওয়ার পর সৌরভকে কি দেখা যাবে রাজনীতির ময়দানে? কারণ, সৌরভ অসুস্থ থাকার সময় বহু রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বকেই হাসপাতালে আনাগোনা করতে দেখা গেছে। কে ছিলেন না সেই তালিকায়? মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম, শিলিগুড়ির বিদায়ী মেয়র অশোক ভট্টাচার্য, প্রাক্তন বোর্ড কর্তা তথা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী অনুরাগ ঠাকুর এবং আরও অনেকে। এছাড়া দেশের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ফোন করেও সৌরভের হাল হকিকত জানতে চেয়েছেন।
২০২১ সালে ভারতীয় জনতা পার্টি যে কোমর বেঁধে বিধানসভা নির্বাচনে নামতে চলেছে, সেকথা আজ আর কারোর অজানা নয়। শোনা যাচ্ছিল, এই নির্বাচনে নাকি গেরুয়া শিবিরের মুখও তাঁকেই করা হতে পারে। এমন খবরও ছড়িয়ে পড়েছিল, সপ্তাহখানেক আগে ফিরোজ শাহ কোটলার যে অনুষ্ঠানে মহারাজ গিয়েছিলেন, তা সেরে সৌরভ হয়তো অমিত শাহের বাংলোয় যাবেন। তবে সেই সব জল্পনার অবসান ঘটিয়ে সেদিন রাতেই বিমানেই দিল্লি ফিরে আসেন ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের সভাপতি। আর তার সাত দিন না কাটতেই সৌরভের অসুস্থ হয়ে পড়া। অসুস্থ সৌরভকে নিয়ে যেভাবে রাজনৈতিক শিবিরের উদ্বেগ বেড়েছে তাতে এক নতুন সমীকরণ দেখতে পাচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।
কিন্তু, এমন হার্ট অ্যাটাকের পর রাজনীতির ময়দানে আসা সৌরভের কাছে কতটা যুক্তিযুক্ত? এহেন প্রশ্নের জবাব কার্যত এড়িয়েই গেলেন দেবী শেঠি। তিনি বললেন, “এ ব্যাপারে আমি কোনও মন্তব্য করতে চাই না। এই সিদ্ধান্তটা সৌরভ এবং আপনাদের সবার উপরই ছাড়লাম।” ইতিপূর্বে ২২ গজের যুদ্ধে বেশ কয়েকবার প্রত্যাবর্তনের লড়াই লড়েছেন সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়। তিনি মানসিকভাবে কতটা শক্তিশালী, সেকথা আমরা সকলেই জানি। সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে সৌরভের এই হার্ট অ্যাটাক তাঁকে রাজনীতির ময়দান থেকে দূরে সরিয়ে রাখতে পারে কি না, এখন সেটাই দেখার।