বিধানসভা নির্বাচনের ঠিক আগে তৃণমূলের হয়ে বেসুরো হয়ে চার্টাড ফ্লাইটে করে দিল্লি গিয়ে বিজেপিতে যোগদান করেছিলেন রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়। তারপর হয়েছে বাংলায় বিধানসভা নির্বাচন এরপর ফলপ্রকাশ। বিপুল ভোটে জয়ী হয়েছেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যয় ও তাঁর পুরো বাহিনী। বিজেপিকে ৭০ গণ্ডিতে বেঁধে দেওয়ার পর থেকেই বদলেছে রাজনৈতিক পরিস্থিতি। বিজেপি হারার পর থেকেই রাজ্যের প্রাক্তন বনমন্ত্রী রাজীব নিজের গলার সুর পাল্টেছেন। ফের জুলাই মাস থেকে রাজীবের সবুজ শিবিরে ফেরা নিয়ে জল্পনা শুরু হয়েছিল। রবিবারেই এবার সেই জল্পনার সমাপ্তি ঘটেছে। কিন্তু বাংলা ছেড়ে ত্রিপুরায় গিয়ে কেন পুনারায় যোগদান এই প্রশ্ন উঠে আসছিল বিভিন্ন রাজনৈতিক মহলে। সেই প্রশ্নের জবাব দিয়েছেন রাজীব।
বাংলা ছেড়ে ত্রিপুরায় যোগ দেওয়া নিয়ে রাজনৈতিক মহলের অন্দরে উঠছে নানান । ধেয়ে আসছে একাধিক প্রশ্নবাণ। সেই সমস্ত কিছুর প্রশ্ন আসতেই এবার সেই সরাসরি কথা বললেন তৃণমূলে ফেরা রাজীব। অভিষেকের হাত ধরে ত্রিপুরা মাটিতে তৃণমূলে ফেরা প্রসঙ্গে তিনি বলেছনে, “আমাকে অভিষেক বন্দোপাধ্যায় বলেছিলেন, ওঁর হাত ধরেই আমাকে যোগ দেওয়াবেন দলে, তাই এখানে আসা। তৃণমূল এখন সর্বভারতীয় দল। তাই ত্রিপুরাতে যোগ দিলে আমার আপত্তি কেন থাকবে?” উল্লেখ্য, তৃণমূলের বিধায়ক পদ থেকে ইস্তফা দেওয়ার দিন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবি হাতে বিধানসভা ছেড়েছিলেন রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই রাজীবই ফের তৃণমূলে যোগ দিয়েই রবিবার প্রিয় দিদিকে উদ্দেশ্য করে বলেছেন, ‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় গোটা ভারতের মা’।
তবে এখানেই শেষ নয় এত ঘটা করে টাকা খরচ করে চার্টাড বিমানে করে দিল্লি উড়ে গিয়ে বিজেপি-তে যোগ দিয়েছিলেন। এবার সেই নিয়ে প্রশ্ন উঠবে না তা কি কখনো হতে পারে। স্বাভাবিক ভাবেই এই নিয়েই অনেকেই জানতে চেয়েছেন। সেই প্রশ্নের উত্তরে রাজীব বলেছনে, ”আজ আর নাম বলতে চাইনা কিন্তু আপনাকে বলছি, আমি চার্টাড ফ্লাইটে যেতে চাইনি। আমাকে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল।” একই সঙ্গে তৃণমূলে যোগ দিয়েই বিজেপির দিকে চ্যলেঞ্জ ছুড়ে আক্রমণ জানিয়ে বলেছেন, “বিজেপি কোনওদিনই মানুষের জন্য ভাবেনি।”
তবে এতো হল রাজীবের কথা। তবে বহু সমালোচকের মতামত, বিজেপির অন্দরে সেইভাবে জায়গা করতে পারেননি বা মানিয়ে নিতে পারেননি রাজীব বন্দ্যোপাধ্যয়। যে কারণে ঘরের ছেলে ঘরে ফিরেছেন। ভোটের ফলপ্রকাশের পর থেকেই কখনো কুণাল ঘোষ আবার কখনো পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের বাড়িতে দেখা মিলেছে দলবদলু রাজীবের। অনেকেই তখন বুঝতে পারছিলেন মুকুলের পর রাজীবও তৃণমূলে প্রত্যাবর্তনের সম্ভাবনা প্রবল। অপেক্ষা শুধু সময়ের। কিন্তু এই মুহূর্তে রাজীবকে বাংলায় যোগদান করাননি অভিষেক কারণ দলের মধ্যে কর্মীদের মধ্যে ক্ষোভ বাড়তে পারে। তাই পূর্বের রাজ্যে গিয়েই যোগদান করালেন প্রাক্তন বনমন্ত্রীর
তবে রাজীবের তৃণমূলে ফেরা নিয়ে দলের অনেক শীর্ষ নেতার পছন্দ হয়নি তা রবিবারেই বোঝা গিয়েছে। রবিবারেই রাজীব দলে যোগ দেওয়া নিয়ে বিস্ফোরক মন্তব্য করেছেন তৃণমূল সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। বলেছেন, “তবে বুঝতে পারছি না, এ রকম একটা টপ টু বটম দুর্নীতিগ্রস্ত লোককে কেন দলে ফিরিয়ে নেওয়া হল?” বলা ভালো পুরানো দলে ফিরলেও এখন রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়কে এখন অনেক কটু কথাই শুনতে ও হজম করতে হবে। সেই কথা হজম করে কতটা দলের হয়ে কাজ করতে পারে সেটাই দেখার।