শ্রেয়া চ্যাটার্জি – করোনা ভাইরাসের দরুন আমাদের নিজস্ব অভিধানে কিছু নতুন নতুন শব্দ যোগ হয়েছে, যেমন কোয়ারেন্টাইন, আইসোলেশন, লকডাউন ইত্যাদি। তবে ইতিহাস ঘাটলে দেখা যায়, কোয়ারেন্টাইন কোনো নতুন ঘটনা নয়। বারবার পৃথিবীর বিভিন্ন জায়গা যখন মহামারির কবলে পড়েছে। তখন এই ভাবেই নিজেদেরকে কোয়ারেন্টাইন রেখে অনেক গ্রাম হাজার হাজার মানুষের প্রাণ বাঁচিয়েছে। তেমনই একটি গ্রামের সন্ধান পাওয়া গেল। আজ থেকে প্রায় সাড়ে তিনশো বছর আগেকার এর ঘটনা। সপ্তদশ শতকের লন্ডনের ছেয়ে গিয়েছিল প্লেগ। তখন সেই সমাজ ভেবে নিয়েছিল একমাত্র আইসোলেশন ছাড়া এই রোগের হাত থেকে বাঁচার আর কোন উপায় নেই। প্লেগের সময় লন্ডনের একটি গ্রাম যার নাম ইয়াম, তারা নিজেদেরকে লন্ডনের আর পাঁচটা জায়গা থেকে একেবারে আলাদা করে নিয়েছিল। এমনকি তারা নিজেদের সীমানা ও পেরোয়নি।
১৬৬৫-১৬৬৬ সালে গোটা ইংল্যান্ড জুড়ে প্লেগের আক্রমণ হয়েছিল। লন্ডন থেকে এই গ্রামটি মাত্র তিন ঘন্টার যাত্রার দূরত্বে পরে। এই গ্রামের মূল অংশটি একেবারে আলাদা করে নেওয়া হয়েছিল এই প্লেগের সময়। এসময় লন্ডনের ১৪ মাস ধরে এই মহামারীর প্রভাব চলতে থাকে। যার ফলে ৭৫,০০০ জন মানুষ তার প্রাণ হারায়। তবে অনেকে মনে করেন, প্রায় ১ লক্ষেরও বেশি মানুষ প্রাণ হারায়। তবে এই ইয়াম গ্রামের মানুষরা যদি নিজেদেরকে কোয়ারেন্টাইনে না রাখতেন তাহলে আরো বেশি মৃত্যু হত। এই গ্রামের প্রত্যেকটি মানুষ দরকার ছাড়া বাইরে বের হতেন না। তবে আলেকজান্ডার হেডফিলড নামে একজন দর্জি, যিনি কোন কিছু না মেনে লন্ডনে যান কাপড় কিনতে। তিনি জানতেন না, সেই জায়গাটি মহামারীতে প্রচন্ড পরিমানে আক্রান্ত ছিল। তারপর তিনি তার গ্রামে ফিরে আসেন এবং তার দোকান খুলে কাজ করতে থাকেন কিন্তু কিছুদিনের মধ্যেই তার অ্যাসিস্ট্যান্ট জর্জ ভিকার্স প্লেগে আক্রান্ত হয়ে পড়েন।
শুধু তাই নয়, এক সপ্তাহের মধ্যে তিনি যে সমস্ত মানুষের সঙ্গে মিশেছেন তারা প্রত্যেকে এই রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়েন। মহামারী ছড়িয়ে পড়তে থাকে গোটা গ্রামে। প্রায় ৪২ জন মারা যান। কিছু মানুষ ভেবে নেন, তারা গ্রামের বাইরে চলে যাবেন। কিন্তু গ্রামের বাইরে ও তো মহামারী সাংঘাতিক আকার ধারণ করেছে। সেই মুহূর্তে তারা স্থির করে তারা গ্রামের বাইরে থেকে কোথাও বেরোবেন না তারা নিজেদেরকে একেবারে জেলবন্দি আসামীর মত করে রাখবেন। যাতে আশেপাশের গ্রামগুলিতে কোনভাবেই না এই মহামারী ছড়িয়ে পড়তে পারে। সমস্ত চার্চ বন্ধ করে দেওয়া হয়। ফাঁকা জায়গাতে বিভিন্ন প্রশাসনিক মিটিং চলতে থাকে। তবে এই গ্রামের গ্রামবাসীরা ভীষণভাবে ঈশ্বর ভক্ত ছিলেন। তারা কোনো ভাবেই এই মহামারীতে ভয় পেতেন না। ভয় পেয়ে তারা এদিক ওদিক ছুটে বেড়াননি। তারা শান্তভাবে বাড়িতে ছিলেন। প্রথমদিকে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়লেও পরের দিকে সংখ্যাটা আচমকাই কমতে শুরু করে। এমন ঘটনা প্রমাণ করে যে, এই সময় গৃহবন্দী দশাকে কখনোই কোন বন্দীদশা মনে করতে নেই, নিজেকে সুস্থ রাখতে বাড়িতে থাকা, এটাই প্রত্যেককে বিশ্বাস করতে হবে।