শ্রেয়া চ্যাটার্জি – অনেক দিন আগেই পরিবেশের মুখে কালি ছিটিয়ে বুদ্ধিজীবী মানুষ কংক্রিটের দেওয়াল তৈরি করছে। মানুষকে উন্নতির শিখরে উঠতে হবে। তার জন্য সামনে যা কিছু থাকবে তাকে ধ্বংস করেই মানুষকে এগিয়ে যেতে হবে। উন্নয়নের শিকার হচ্ছে প্রকৃতি, গাছপালা এবং প্রাণীকূল। অরুণাচলের একটি সুন্দর মনোরম উপত্যকা, দিবাং। কিন্তু এই সৌন্দর্যের মুখে কালিমা ছিটিয়ে সেখানে তৈরি হবে জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র। জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র মানুষের প্রয়োজনেই তৈরি হবে একথা ঠিক, কিন্তু তার জন্য কাটা হবে বহু গাছ বাসা হারা হবে বহু পাখি প্রাণিকুল।
অরুণাচল প্রদেশের হাইড্রো পাওয়ার কর্পোরেশন এবং জিন্দাল পাওয়ার লিমিটেডের যৌথ উদ্যোগে এইখানে তৈরি হতে চলেছে এই জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রটি। কেন্দ্রটি তৈরি করার জন্য কাটা হবে ১১৫০ হেক্টর জমির গাছপালা। করোনা ভাইরাস এর জন্য যখন গোটা বিশ্বজুড়ে লকডাউন চলছে তখন পরিবেশের দূষণ অনেকটাই কমে এসেছে। পরিবেশ এর এই সেরে ওঠার মুহূর্তে এখন একটু হয়তো প্রাণ খুলে শ্বাস নিচ্ছে, ঠিক এই সময় এতগুলি গাছ কাটার ফলে এর বিরূপ প্রভাব আবার প্রকৃতিতে পড়বে না তো? এ প্রশ্নের উত্তর একমাত্র প্রকৃতি দিতে পারে। বন জঙ্গলে তো শুধু গাছপালা থাকে না, গাছপালাকে আশ্রয় করে গড়ে ওঠে প্রচুর প্রাণীকুলের বাস্তুতন্ত্র। গাছপালা কাটা হলে পরোক্ষভাবে এরাও গৃহহারা হয়ে সংকটে পড়বে।
তবে যেখানে কেন্দ্রটি গড়ে তোলার পরিকল্পনা চলছে সেখানে বাঘের খুব একটা দেখা নেই। কিন্তু দিবং এর ওয়াইল্ডলাইফ স্যাংচুয়ারি থেকে ১২ কিলোমিটার দূরে বাঘের দেখা পাওয়া গেছে। ওই বনভূমির ইন্সপেক্টর জেনারেল অঞ্জন মহান্তি জানান, “এখানকার সাধারণ মানুষের তরফ থেকে কোনরকম এই প্রজেক্ট নিয়ে কোনো কথা শোনা যায়নি।” ফেব্রুয়ারি মাসে এক বিশেষজ্ঞের দল এই জায়গাটি পরিদর্শন করেন এবং জানান এই প্রজেক্টটি চালু হবে একটি প্রত্যন্ত এলাকাতে। পুরো এলাকাটি একটি পরিকল্পনামাফিক ভাবে তৈরি করার ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
যেখানে প্রজেক্ট তৈরি করা হচ্ছে, সেই জায়গাটি হল প্যালিও- আর্টিক, ইন্দো- চাইনিজ এবং ইন্দো মালায়লাম, এমন ভৌগোলিক অবস্থানে অবস্থিত। যেখানে ভরপুর রয়েছে প্রাণীকুল এবং উদ্ভিদকুল। এ সমস্ত জায়গাতে কিভাবে সমস্ত দিকটা বজায় রেখে এই প্রযুক্তি চালু করা যায়, তা নিয়ে তৈরি হয়েছে মতপার্থক্য। এ প্রসঙ্গে যোর্জ তানা জানান, এই জায়গাটি ভৌগোলিক দিক থেকে প্রচন্ড সংবেদনশীল এলাকা। তার মতে, এখানকার সাধারণ মানুষের কোনো কথাই শোনা হয়নি। যাই হোক, তর্ক বিতর্কের মাধ্যমে যদি একটা কোন সঠিক সিদ্ধান্ত বেরিয়ে আসে, যেখানে বাস্তুতন্ত্র, গাছপালাও রক্ষা পাবে, আবার এই জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র গড়ে উঠবে, তাহলেই সবদিক ঠিকঠাক থাকবে।