শ্রেয়া চ্যাটার্জী : দোল উৎসবের মধ্য দিয়ে একটি ধর্মনিরপেক্ষ বিষয় উঠে আসে। জাতি, ধর্ম নির্বিশেষে প্রত্যেককে আবিরের রঙে রাঙানো হয়। পশ্চিমবঙ্গে এটি ‘বসন্ত উৎসব’ নামে পরিচিত। দোলের আগের দিন সমস্ত কাঠ, পাতা ইত্যাদি জ্বালিয়ে ন্যাড়া পোড়ানো হয়। পশ্চিমবঙ্গে বিশেষত শান্তিনিকেতনে দোল উৎসব বেশ ঘটা করে পালন করা হয়। তবে মায়াপুর নবদ্বীপ, বিষ্ণুপুর, কলকাতায় রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয় এই দোল উৎসব পালন করা হয়। আবিরের রঙে রাঙিয়ে দেওয়া হয় প্রত্যেককে।
শান্তিনিকেতন, বোলপুর : দোলযাত্রা উৎসব শান্তিনিকেতনে বসন্ত উৎসব নামে পরিচিত। অতীতে এখানে বিদ্যালয় এর বসন্তের আগমন উপলক্ষে একটি ছোট্ট ঘরোয়া অনুষ্ঠানে নাচ, গান, আবৃত্তি, অভিনয় করা হতো। পরবর্তীকালে এই অনুষ্ঠানটি পরিব্যপ্ত হয়ে শান্তিনিকেতনের অন্যতম জনপ্রিয় উৎসব বসন্ত উৎসব এর আকার নেয়। ফাল্গুনী পূর্ণিমা অর্থাৎ দোল পূর্ণিমাএ শান্তিনিকেতনে বসন্ত উৎসবের আয়োজন করা হয়। পূর্বরাত্রিতে বৈতালিক হয়। পরের দিন সকালে ‘ওরে গৃহবাসী খোল দ্বার খোল’ গানটির মাধ্যমে অনুষ্ঠানের সূচনা করা হয়। সন্ধ্যায় গৌড় প্রাঙ্গণে রবীন্দ্রনাথের কোন নাটক অভিনয় করা হয়। সারা প্রাঙ্গন মেতে ওঠে রবীন্দ্রনাথের গান, নাচ এবং আবিরের রঙে। শুধুমাত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা বিদেশ থেকে দেশ-বিদেশের যাত্রীদের আগমন ঘটে শুধুমাত্র এই দোল উৎসব পালন করার জন্য। ২০২০ সালে করোনাভাইরাস এর জন্য এই উৎসব বাতিল করা হয়েছে।
মায়াপুর, নবদ্বীপ নদীয়া : দোল উৎসব তথা নবদ্বীপের গৌর পূর্ণিমায় নবদ্বীপে লাখ লোকের সমাগম হয়। চৈতন্য জন্মভূমিতে প্রসাদের অভাব হয়না, স্থানীয় মানুষের উদ্যোগে মহাপ্রভুর ও মন্দিরে আয়োজন করা হয় প্রসাদের রান্না। দোলের ১৫ দিন ধরে নবদ্বীপ ধাম গৌড়িয় মঠ এর রান্নাঘরে তিন বেলার খাবারের আয়োজন করা হয়। দোল পূর্ণিমায় হলো নবদ্বীপের গৌড় পূর্ণিমা পূর্ণিমা নবদ্বীপের ঘরের ছেলে শ্রী গৌরাঙ্গের আবির্ভাব হয় শ্রী চৈতন্যদেবের জন্মস্থান নবদ্বীপ ধাম, নবদ্বীপবাসি তৈরি থাকেন। দেশ-বিদেশ থেকে নানা ভক্তের সমাগম হয়। পণ্ডিতেরা বলেন ১৪৬৮ সালে দোল পূর্ণিমার সন্ধ্যায় জন্ম নিলেন গোরাচাঁদ এই স্মৃতিকে স্মরণ রাখতে বৈষ্ণব সাজে দোল পূর্ণিমা কে বদলে দিলেন গৌর পূর্ণিমায়। শ্রীচৈতন্য জন্মের প্রায় সাড়ে পাঁচশ বছর পরেও চৈতন্য ধামে দোলের দিন তাই শুধুই মহাপ্রভুর আবির্ভাব উৎসব পালিত হয়। মহাপ্রভুর মন্দির এর জন্মস্থান আবির, কুমকুম নয়, পঞ্চামৃত দিয়ে সাজানো হয়। দোল পূর্ণিমার সন্ধ্যায় আকাশে চাঁদ উঠলে মন্দিরে শুরু হয়ে যায় মহা অভিষেক। শ্রী চৈতন্য বিগ্রহের প্রতীক হিসাবে জগন্নাথ মিশ্রের ১০৮ ঘড়া জলে স্নান করানোর পর উপাচারে অভিষেক বা অন্য জাত কর্মসূচির সঙ্গে সঙ্গে বদলে যায় কীর্তন থেকে আরতি। সানাইএর পর জগন্নাথ মন্দিরে যত রাত বাড়ে হরি কীর্তন ঘন হয়ে আসে। নবদ্বীপের গঙ্গার পূর্ব পাড়ের মায়াপুরে গড়ে ওঠে সাগর পাড়ে বিদেশি বৈষ্ণব ভক্তদের মত বিদেশীদের বিপুল অর্থ এবং নিখুঁত পরিকল্পনা ৫০ বছরের কম সময় মায়াপুর নবদ্বীপের দোল তথা শ্রী চৈতন্য দেবের আবির্ভাব উৎসব কে আন্তর্জাতিক মাত্রায় পৌঁছে দিয়েছে।
বিষ্ণুপুর : এই জায়গাটি যেহেতু মন্দির কেন্দ্রিক তাই এখানেও আবির খেলা হয়। দোল পূর্ণিমা উদযাপন করা হয় আবিরের রঙে রাঙিয়ে। এখানে রং খেলার জন্য কোনরকম কৃত্রিম রং ব্যবহার করা হয় না সমস্ত টাই ব্যবহৃত হয় আবির।
রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়, কলকাতা : শান্তিনিকেতনের বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের মতন কলকাতায় রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয় দোলের দিন না হলেও তার দু তিনদিন আগে এখানে দোল উৎসব পালন করা হয়। শুধুমাত্র বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র-ছাত্রীরাই নয়, বাইরে থেকে অনেক এগিয়ে এখানে দোল উৎসব পালন করে আবিরের রঙে রাঙিয়ে দেওয়া হয় সকলকে। সাথে থাকে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নানান রকম গান এবং তার গান,নাটক নিয়ে চলতে থাকে নানান রকম সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।