এখন আর ইউটিউব কেবল বিনোদনের প্ল্যাটফর্ম নয়, বরং লাখো মানুষের কাছে এটি পরিণত হয়েছে পূর্ণকালীন ক্যারিয়ার বিকল্পে। কমেডি, ট্রাভেল ভ্লগ, টেক রিভিউ কিংবা ফাইন্যান্স সংক্রান্ত ভিডিও—প্রতিদিন লক্ষ লক্ষ কনটেন্ট আপলোড হচ্ছে। কিন্তু সবার মনে একটাই প্রশ্ন ঘোরাফেরা করে: ভারতে ইউটিউব কত টাকা দেয় ১ হাজার ভিউতে?
ইউটিউব আয়ের মূল উৎস
ইউটিউবারদের প্রধান আয়ের রাস্তা হলো AdSense। ভিডিওতে বিজ্ঞাপন দেখালে সেই অনুযায়ী অর্থ পাওয়া যায়। আয় হিসাব হয় দুটি মাপকাঠিতে—
CPM (Cost Per Mille): বিজ্ঞাপনদাতারা প্রতি ১,০০০ বিজ্ঞাপন ভিউয়ের জন্য যে টাকা দেন।
RPM (Revenue Per Mille): ইউটিউব তার ৪৫% ভাগ কেটে নেওয়ার পর কনটেন্ট ক্রিয়েটরের হাতে যা আসে।
ভারতে বিজ্ঞাপনদাতাদের খরচ তুলনামূলকভাবে কম হওয়ায় এখানে আয়ের হারও পশ্চিমা দেশগুলির চেয়ে অনেক নিচে। গড়ে প্রতি ১,০০০ ভিউতে আয় হয় ৩০ থেকে ১৫০।
এন্টারটেইনমেন্ট ও ভ্লগিং ভিডিও: ৩০–৬০
ফাইন্যান্স, টেক ও এডুকেশন ভিডিও: ৮০–১৫০
কোন ফ্যাক্টর আয় নির্ধারণ করে?
ইউটিউবে আয় নির্ভর করে বেশ কিছু বিষয়ে—
ভিডিওর জঁর (ফাইন্যান্স ও টেক কনটেন্টে বেশি আয় হয়)
দর্শক কোন দেশে আছেন (বিদেশি ভিউ মানেই বেশি রোজগার)
অ্যাডের ধরন (স্কিপেবল, নন-স্কিপেবল, ডিসপ্লে—প্রত্যেকের রেট আলাদা)
ওয়াচ টাইম ও এঙ্গেজমেন্ট (ভিডিও যত বেশি সময় দেখা হয়, তত বেশি বিজ্ঞাপন দেখা যায়)
সিজন ও ডিমান্ড (উৎসবের মরশুমে বিজ্ঞাপনদাতারা বাজেট বাড়ান)
শুধু বিজ্ঞাপন নয়
আজকের দিনে ইউটিউবাররা কেবল বিজ্ঞাপনেই সীমাবদ্ধ থাকছেন না। আয়ের জন্য ব্যবহার করছেন আরও নানা উপায়—
Super Chat ও Super Stickers: লাইভ স্ট্রিমে ভক্তদের সাপোর্ট
Channel Memberships: সাবস্ক্রিপশনের মাধ্যমে এক্সক্লুসিভ সুবিধা
Brand Sponsorships: পণ্য প্রচারের জন্য কোম্পানির আর্থিক সাহায্য
Affiliate Marketing: লিঙ্ক থেকে বিক্রির উপর কমিশন
ভারত বনাম বিদেশ: আয়ের পার্থক্য
ভারতে ১,০০০ ভিউয়ে যেখানে সর্বাধিক ১৫০ পর্যন্ত আয় হয়, সেখানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা বা ইউরোপে এই হার দাঁড়ায় ১৬০ থেকে ৬৫০ পর্যন্ত। ফলে ভারতীয় ইউটিউবারদের মধ্যে যাদের আন্তর্জাতিক দর্শক বেশি, তাঁদের মাসিক আয় কয়েকগুণ বেড়ে যায়।
মাসিক আয়ের হিসাব
ধরা যাক, কোনও চ্যানেলে মাসে ১০ লক্ষ ভিউ এসেছে এবং গড় RPM ধরা হয়েছে ৮০। তাহলে আয় দাঁড়াবে—
(10,00,000 ÷ 1,000) × 80 = ৮০,০০০।
যদি একই ভিউ বিদেশি দর্শক থেকে আসে, তবে আয় বাড়তে পারে ₹৩–৪ লক্ষ পর্যন্ত।
ইউটিউব কি পূর্ণকালীন ক্যারিয়ার হতে পারে?
অনেকের কাছে ইউটিউব শুধুই শখ হলেও, আজ এটি হয়ে উঠেছে একটি বড় ক্যারিয়ার অপশন। অবশ্যই এর জন্য লাগে নিয়মিত পরিশ্রম, সৃজনশীলতা এবং দর্শকদের আস্থা অর্জনের ক্ষমতা। সফল ক্রিয়েটররা মাসে কয়েক লক্ষ থেকে কোটিও উপার্জন করছেন। ফলে বলা যায়, সঠিক পরিকল্পনা ও দৃঢ় ইচ্ছাশক্তি থাকলে ইউটিউব শুধু পার্ট-টাইম নয়, পূর্ণকালীন ক্যারিয়ারও হতে পারে।














