শ্রেয়া চ্যাটার্জি : ‘দাও ফিরে সে অরণ্য লও এ নগর’ কবি বহুদিন আগে এমন কথা লিখেছিলেন তার কবিতাতে। কিন্তু কলকাতাবাসী এখনো তা বুঝতে পারছেন না। কলকাতাবাসী উন্নয়নের জন্য এখনো কেটে যাচ্ছেন গাছ। বিঘের পর বিঘে জমিতে করা হচ্ছে নগরায়ন । তৈরি হচ্ছে বহুতল, শপিং মল। একবারও বুঝতে পারছেন না এইভাবে গাছ কাটার ফলে পরবর্তী কি ভয়ঙ্কর দিন তাদের সামনে আসতে চলেছে। একটি তথ্য থেকে উঠে এসেছে বট, অশ্বত্থ, আম, কালোজাম, বাবুল, ডুমুর এবং নিমের মতন এই ধরনের গাছ আস্তে আস্তে কমতে শুরু করেছে। কলকাতাতেই প্রায় ২৭৬ রকমের গাছের প্রকার দেখা যায়। এদের মধ্যে কিছু আছে স্বাভাবিকভাবেই কলকাতাতে জন্মানো গাছ এবং কিছু আছে যা বাইরে থেকে আগত। তথ্য অনুযায়ী জানা যাচ্ছে, কলকাতাতে নগরায়নের দাপটের জন্য প্রায় ২১ শতাংশ প্রজাতির গাছ শেষ হয়ে গেছে অতীতের ৬৪ বছরে। ২০০৬ সাল থেকে ২০১০ সালে একটি গণনা থেকে জানা গেছে যে, ২৭৬ টি গাছের মধ্যে ৫৮ টি গাছ কে আর দেখতেই পাওয়া যায় না। এদের মধ্যে ঝাউ, মুচুকুন্দু কাঠবিমলা, জয়ন্তী, হরি কাঁকড়া ইত্যাদি রয়েছে।
আরও পড়ুন : পরিবেশ বন্ধু চড়ুই পাখি আজ উধাও হতে চলেছে, কিছু দিন পরে এদের শুধুই ছবিতে দেখাতে হবে
গাছ কাটার সঙ্গে সঙ্গে গাছের মধ্যে বাসা বেঁধে যারা তাদের বংশ বিস্তার করতে পারে সেই পাখিরাও হয়ে যাচ্ছে উধাও। মাছরাঙ্গা, পানকৌড়ি কাঠঠোকরা, শকুন এবং সর্বোপরি ঘরের পাখি চড়ুই এখন আর দেখা যায় না । পুকুর বুজিয়ে তৈরি হচ্ছে বহুতল এবং এই বহুতল গুলি সাধারণত গড়ে উঠছে বেহালা, যাদবপুর, টালিগঞ্জ – এ।
মানুষ আসলে উন্নতির শিখরে পৌঁছতে চায়। আশেপাশে কোন গাছপালা বা পাখির কলকাকলি তার বোধহয় পছন্দ না। তাই সে এমন কঠোরভাবে গাছ কেটে চলেছে, পুকুর বুজিয়েই চলেছে । কিন্তু এত অত্যাচার বোধহয় প্রকৃতি বেশিদিন সহ্য করবে না। তার উত্তর দেবার দিন সত্যিই চলে এসেছে। প্রকৃতির কাছে মানুষ যে বড় অসহায় তার প্রমাণ এখন আমরা হাতেনাতে পাচ্ছি। ইতালি, ফ্রান্স, চিন সহ সমস্ত বিশ্বের বড় বড় শহর গুলি স্তব্ধ হয়ে গেছে, একটি ভাইরাসের আক্রমণে। আমাদের মানুষের শক্তি কতটা? প্রকৃতির কাছে আমরা কিছু নয়। প্রকৃতির ওপর এত অত্যাচার দিনের পর দিন আমরা করেই চলেছি। তার শোধ তো সে একদিন তুলবেই।
আরও পড়ুন : জন্ম থেকেই নেই দুই হাত, কিন্তু এই কন্যা একজন সফল গাড়ির চালক
তবে আমরা কিন্তু নিজেদের মতন করে চেষ্টা করতেই পারি। নগরায়ন কে বন্ধ করা ওইভাবে যাবে না, কারণ কোন সমাজ বা জাতির যদি উন্নতি না হয়, তাহলে সমাজ সেখানে স্তব্ধ হয়ে যায়। সমাজকে অবরুদ্ধ করা বা থামিয়ে দেওয়া সেটাও আমাদের কাম্য নয়। আমাদের যতটুকু সাধ্য আমরা ততটুকু চেষ্টা করতেই পারি। আশেপাশে বাড়ির কোনায় আমরা নিম, বট, অশ্বত্থ অর্থাৎ বড় বড় পাতা ওয়ালা ছায়া প্রদানকারী গাছ লাগাতে পারি। গাছের মধ্যে ফেলে দেওয়া প্লাস্টিকের বোতল বা নারকেলের মালা বেঁধে তৈরি করে দিতে পারি পাখিদের থাকার ছোট ছোট বাসা। ছোট পাত্রে ঝুলিয়ে দিতে পারি তাদের প্রয়োজনীয় খাবার এবং জল। এইটুকু সাহায্য আমরা প্রত্যেকেই করতে পারি। তাহলে হয়তো কিছুটা ক্ষতি কে আমরা সামলে উঠতে পারব।