শ্রেয়া চ্যাটার্জি – সিনেমা জগতের নক্ষত্র পতন হল। মুম্বাইয়ের কোকিলাবেন ধিরুভাই আম্বানি হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলেন জনপ্রিয় অভিনেতা ইরফান খান। এমনিতেই করোনার জন্য ভারতবাসীর মন মেজাজ ভালো নেই। তার মধ্যে এমন একটি দুঃসংবাদে, প্রত্যেকের বুকের ভেতরটা যেন দলা পাকিয়ে উঠছে কান্নায়। যেন কোন খুব কাছের মানুষ মারা গেছেন। কাছের মানুষ বলে ভুল হয় উনি তো হৃদয়ের মানুষ ছিলেন প্রত্যেকের।
তথাকথিত হ্যান্ডসাম নায়ক দের থেকে খানিকটা অন্য রকম হয়েও মানুষটি শুধুমাত্র নিজের অভিনয় দক্ষতায় প্রত্যেকের মনের মনিকোঠায় জায়গা করে নিয়েছিলেন। অনেকদিন ধরে এই মানুষটি টিউমারে আক্রান্ত ছিলেন। অনেক দিন জীবনের সঙ্গে যুদ্ধ করে চলছিলেন। কয়েক মাস আগেই লন্ডন থেকে ফিরেছেন চিকিৎসা করে। তার শেষ চলচ্চিত্র ‘angreji medium’। যা শুধু ভারতবর্ষেই নয় আন্তর্জাতিকভাবেও যথেষ্ট জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিল ‘Jurassic world’ এবং ‘Life of Pi’ সমতুল্য হয়ে উঠেছিল।
ইরফান খান জন্মগ্রহণ করেছিলেন জয়পুরে। ১৯৭৫ সালের শোলে সিনেমা দেখে তিনি বেশ অনুপ্রাণিত হন। অমিতাভ আর ধর্মেন্দ্রর সিনেমার একটি ছবি দেখে তিনিও অনুপ্রাণিত হয়ে তার বন্ধুর সঙ্গে অবিকল অমন একটি ছবি পোস্ট করেছিলেন ইনস্টাগ্রামে। তা সে অনেক বছর আগেকার এর কথা। শুরুটা এই ভাবেই হয়েছিল। পছন্দের তালিকায় ছিলেন রাজেশ খান্নাও। মিঠুন চক্রবর্তীর মতন চুল কাটতে ভালবাসতেন, সেইজন্য সেলুনে গিয়ে প্রথমে বলেছিলেন তার চুলটাকে সোজা করে দিতে অর্থাৎ তার চুলটা কোঁচকানো ছিল। মিঠুন চক্রবর্তীর মতন চুল কেটে ছবি দেওয়ার পরে ইনস্টাগ্রামে তিনি লিখেছিলেন “প্রথম দিকে চুলটা ভালো থাকলেও, পরের দিকে চুলটা একেবারে পাখির বাসার মত হয়ে যেত।”
শত আনন্দের মধ্যেও আজ মেনে নিতে হবেই ইরফান নেই। জীবনযুদ্ধে পেয়েছেন তার পরিবারের সকলকে। সকলের ভালোবাসায় তিনি আপ্লুত হয়েছেন। আমরা প্রত্যেকেই তার আত্মার শান্তি কামনা করি। কিন্তু সিনেমা জগতে এ এক অপূরণীয় ক্ষতি। জীবন থাকলে মৃত্যু আসবেই এ কথা সত্য, কিন্তু ষাটের কোটা আসতে না আসতেই, তিনি চিরঘুমে শায়িত হলেন। যা বড় বেদনার। প্রত্যেকের মনের মধ্যে থেকে যাবে ইরফানের সেই মন ভোলানো হাসি। আর মনের মধ্যে থাকবে তার অসাধারণ অভিনয় করা সিনেমারা।