বাংলা বিধানসভা নির্বাচনের আগে শাসকদলের দুয়ারে দুয়ারে সরকার প্রকল্প ছিল নির্বাচনী চমক। সেই দুয়ারে দুয়ারে সরকার প্রকল্পের মধ্যে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব পেয়েছিল স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্প। এই প্রকল্পের মাধ্যমে বাংলার প্রত্যেক রাজ্যবাসী বিনামূল্যে সরকারি এবং নির্ধারিত বেশকিছু বেসরকারি হাসপাতালে তাদের চিকিৎসা করাতে পারবে। তবে এই নিয়েই এখন শুরু হয়েছে সমস্যা। বেসরকারি হাসপাতালগুলো সাফ জানিয়ে দিয়েছে, কিছু দাবি না মানা হলে স্বাস্থ্য সাথী প্রকল্পের টাকায় সুস্থভাবে চিকিৎসা পরিষেবা দেওয়া সম্ভব নয়।
স্বাস্থ্য সাথী প্রকল্পের কার্ডের মাধ্যমে চিকিৎসা করালে কোন রোগের জন্য কত টাকা নেবে তা বেঁধে দিয়েছে রাজ্য সরকার। তাতে বেশ অসন্তুষ্ট বেসরকারি হাসপাতালগুলো। তাই গতকাল বেসরকারি হাসপাতালগুলোর থেকে একদল প্রতিনিধি স্বাস্থ্যভবনে এসে বৈঠক করেন। তারা স্বাস্থ্যভবনে এসে প্রধানত তিনটি দাবি করে। প্রথমত তারা জানিয়ে দেয়, এরকমভাবে নির্ধারিত মূল্যে তাদের পক্ষে চিকিৎসা পরিষেবা দেওয়া সম্ভব না। কেমন সরকার থেকে প্রসবের জন্য মাত্র ৭ হাজার টাকা এবং গলব্লাডার অপারেশনের জন্য মাত্র ১০ হাজার টাকা নির্ধারণ করে দিয়েছে। কিন্তু বেসরকারি হাসপাতালে এত কম খরচে অস্ত্রোপচার করা সম্ভব নয়। তারা জানিয়েছে, তাদের হাসপাতালে রক্ষণাবেক্ষণ, কর্মীদের বেতন ও একাধিক খরচ সামলে এত স্বল্প মূল্যে পরিষেবা দেওয়া প্রায় অসম্ভব।
দ্বিতীয়ত, বেসরকারি হাসপাতালে প্রতিনিধিদল বলেছে যে সবার কাছে যেত এখন স্বাস্থ্যসাথী কার্ড আছে, তাই কোন ছোটখাটো রোগের ক্ষেত্রেও তারা বড় হাসপাতালে ভর্তি হতে চাইছে। সরকার এই বিষয়টা নিয়ে হস্তক্ষেপ করুক। এরকমভাবে এত সংখ্যক লোককে একসাথে পরিষেবা দেওয়া অসম্ভব। সরকার নির্ধারিত করে দিক যেকোন জটিল রোগ হলেই তবে স্বাস্থ্য সাথীকার্ড এর মাধ্যমে বড় হাসপাতালে ভর্তি হওয়া যাবে। এছাড়াও তারা জানিয়েছে সরকার যে টাকা দেয় সেই টাকা যাতে হাসপাতালে একাউন্টে সময়মতো চলে আসে। রোগীর চিকিৎসার এক মাসের মধ্যে যাতে সরকার সেই টাকা দিয়ে দেয়।
বেসরকারী হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের প্রতিনিধিদলের দাবি জেনে রাজ্য সরকার যত তাড়াতাড়ি সম্ভব এক লিখিত আবেদন জমা করতে নির্দেশ দিয়েছে। সেই সাথে তারা জানিয়ে দিয়েছে, এই ব্যাপারে যতদিন না রাজ্য সরকার কোনো সিদ্ধান্ত জানাবে, ততদিন বেসরকারি হাসপাতালগুলোকে স্বাস্থ্যসাথী কার্ড নিয়ে গেলে তাদের চিকিৎসা করতে হবে। প্রসঙ্গত স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্পের আওতায় প্রত্যেক পরিবার ৫ লাখ টাকার সুবিধা পাবে। সরকারি হাসপাতাল ছাড়াও ১৫০০ বেসরকারি হাসপাতালে মিলবে এই পরিষেবা।