‘আপনি বিজেপি ঘনিষ্ঠ’, নন্দীগ্রাম মামলার বিচারপতিকে সরাসরি আক্রমণ মমতার আইনজীবী

কোন একটি রাজনৈতিক মামলার বিচারপতি এমন একটি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে জড়িত, যে ওই মামলার একটি পক্ষে রয়েছে, বিষয়টি যেরকম আইনগতভাবে বিতরকের তেমনি দুটি প্রতিদ্বন্দ্বী দলে জন্য বিষয়টি খুব বিরক্তিকর। আর…

Avatar

By

কোন একটি রাজনৈতিক মামলার বিচারপতি এমন একটি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে জড়িত, যে ওই মামলার একটি পক্ষে রয়েছে, বিষয়টি যেরকম আইনগতভাবে বিতরকের তেমনি দুটি প্রতিদ্বন্দ্বী দলে জন্য বিষয়টি খুব বিরক্তিকর। আর বিচারপতির জন্য তো বিষয়টি সবথেকে বেশি বিতরকের। কথা হচ্ছে, নন্দীগ্রামের ভোট পুনর্গননা নিয়ে করা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এর মামলা নিয়ে। আর এই মামলার বিচারপতি হলেন সেই কৌশিক চন্দ যিনি নাকি নিজের সম্পূর্ণ আইনজীবী ক্যারিয়ারে একজন বিজেপি ঘনিষ্ঠ আইনজীবী হিসেবে পরিচিত ছিলেন।

আর তার এই ইমেজ নিয়ে এবারে শুনানির মঞ্চ থেকে সরাসরি কটাক্ষের শিকার হতে হল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আইনজীবী অভিষেক মনু সিংভি এর কাছ থেকে। শুনানির মঞ্চে দাঁড়িয়ে সরাসরি অভিষেক মনু সিংভি তাকে বললেন, “আপনি বিজেপি ঘনিষ্ঠ।” অভিযোগ শুনে অবশ্য মুচকি হাসলেন বিচারপতি। দিলেন উত্তর। বললেন, “যদি নির্দিষ্ট কোনো রাজনৈতিক দলের পক্ষে মামলা করে থাকি তাহলে সেই রাজনৈতিক দলের কর্মী বা সমর্থক হতে হবে এরকম কোন কথা কিন্তু নেই। ওকালতি অনেক মামলাতেই করতে হয়। দীর্ঘ সময় ধরে ভারতীয় জনতা পার্টির হয়ে মামলা করেছি। কলকাতায় বিজেপির বহু কেন্দ্রীয় নেতার সঙ্গে আমার ছবি বেরিয়েছিল। এখানে যারা যারা উপস্থিত রয়েছেন তাদের সকলের প্রথম পরিচয় একজন আইনজীবী। পরে তাদের রাজনৈতিক পরিচয়।”

যদিও অভিষেক মনু সিংভির অভিযোগ কিন্তু একেবারে ধোপে টিকছে না এরকম নয়। বিচারপতি কৌশিক চন্দ যখন নিজে আইনজীবী ছিলেন তখন ভারতীয় জনতা পার্টির হয়ে বহু মামলা লড়েছেন। তার এমন বেশ কিছু ছবি বেরিয়েছে, যেখানে তিনি রাজ্য বিজেপি নেতাদের একেবারে পাশাপাশি বসে রয়েছেন। আর তারই বেঞ্চে নন্দীগ্রাম মামলার মতো একটি অত্যন্ত হাইপ্রোফাইল মামলা পৌঁছে যাওয়ায় পক্ষপাতিত্বের গন্ধ পাচ্ছে তৃণমূল কংগ্রেস। এদিন হাইকোর্টে ভোটের ফলাফল এবং কারচুপি সংক্রান্ত মামলার শুনানি চলার সময় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আইনজীবী অভিষেক মনু সিংভি বিচারপতি কৌশিক চন্দকে সরাসরি বিজেপি ঘনিষ্ঠ হিসেবে দাগিয়ে দিলেন। তার সঙ্গে তিনি জানিয়ে দিলেন নন্দীগ্রাম মামলা তিনি বিচার করলে তার রায় রাজ্যের নাও যেতে পারে।

নন্দীগ্রাম মামলার শুনানিতে মামলা অন্যত্র সরানোর আবেদন প্রসঙ্গে বিচারপতি অভিষেক মনু সিংভি কে বলেন, ” আপনারা প্রশাসনিকভাবে প্রধান বিচারপতির কাছে বিচারপতি বদলের আবেদন করেছেন, প্রধান বিচারপতি এখনো পর্যন্ত কোন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেননি। এখন আপনারা আবার আমার কাছে আবেদন করছেন। আমার শুনানি করতে কোন আপত্তি নেই তাহলে আপনাদের প্রধান বিচারপতির কাছে করা আবেদন প্রত্যাহার করতে হবে। দুটো আবেদন একসাথে চলতে পারে না। ”

এই প্রশ্নের উত্তরে অভিষেক মনু সিংভি বললেন, ” এজলাসে আমার মক্কেল মামলা করতে চাইছেন না কেন জানেন? আপনি আইনজীবী থাকাকালীন বিজেপির বহু গুরুত্বপূর্ণ মামলা করেছিলেন। ইমাম ভাতা, বিজেপির রথযাত্রা এবং কলকাতায় আরএসএস এর অনুষ্ঠান করতে না দেওয়ায় রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে বহু মামলায় আপনাকে দেখা গিয়েছিল। পাশাপাশি আপনার সঙ্গে ভারতীয় জনতা পার্টির সরাসরি যোগাযোগ রয়েছে। তাই আমার মক্কেল চাইছেন যাতে অন্য এজলাসে মামলার শুনানি হোক, কারণ এই এজলাসে মামলা করা হলে, রাজ্যের পক্ষে রায় হয়তো যাবে না।” এই যুক্তির পাল্টা জবাব অবশ্য দিয়েছেন বিচারপতি কৌশিক চন্দ। তবে এদেশের বিচারব্যবস্থার ইতিহাসে এরকম ঘটনা খুবই বিরল। এর আগেও বহুবার এজলাস বদলানোর দাবি উঠেছে কিন্তু তার কারণ হিসেবে বিচারপতিকে কোন একটি বিশেষ রাজনৈতিক দল দ্বারা প্রভাবিত, এই অভিযোগ তেমন একটা তোলা হয়নি।