কলকাতা: গত মাসে একটি স্থানীয় ক্লাবে নিজের জন্মদিন পালন করে অনুগামীদের উদ্দেশ্যে কেক কেটেছিলেন ফুটবলের রাজপুত্র মারাদোনা। তখন হয়তো তিনি জানতেনও না এটিই তাঁর জীবনের শেষ জন্মদিন পালন করা হবে। জন্মদিন পালনের বেশ কিছুদিন পরেই মস্তিষ্কের সংক্রমণজনিত সমস্যা নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন মারাদোনা। তারপর কিছুদিন কেটে গেলে হাসপাতাল থেকে বাড়ি ফিরে আসেন। কিন্তু সেই ফেরাটা জীবনের মূল স্রোতে আর ফেরা হল না। অবশেষে আজ, বুধবার নিজের বাড়িতে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলেন ষাটোর্ধ্ব দিয়েগো মারাদনা। ফুটবলের রাজপুত্রের মৃত্যুতে কার্যত শোকের ছায়া নেমে এসেছে ফুটবল মহলে। তবে শুধু ফুটবল মহল বললে ভুল হবে। ক্রিকেট তথা অন্যান্য ক্রীড়ামহল এমনকি শিল্প-সংস্কৃতির রাজনৈতিক সমস্ত মহলেই শোকের ছায়া নেমে এসেছে। শোক প্রকাশ করেছেন অনেক ব্যক্তিত্বরা। মারাদোনার মৃত্যুতে গভীরভাবে শোক প্রকাশ করেছেন সঙ্গীত জগতের অন্যতম শিল্পী তথা বাংলা ব্যান্ড চন্দ্রবিন্দুর স্রষ্ঠা অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায়। তাঁর কথায় কলকাতা যখন ব্রাজিল ছিল, সবুজ-হলুদ পতাকা ভরে গিয়েছিল তিলোত্তমায়, ঠিক সেই সময় বেঁটেখাটো একটা লোক কার্যত ফুটবলবিশ্বকে নাড়িয়ে দিয়েছিল। এক ঐশ্বরিক ক্ষমতা সম্পন্ন ভগবানরূপী মানুষের নাম দিয়েগো মারাদনা।
অনিন্দ্য মারাদোনার ফুটবল খেলা দেখার জন্য পাগল ছিলেন। তাঁকে দেখেই কার্যত আর্জেন্টিনা দলের প্রতি তাঁর ভালবাসা জন্মেছিল। সেই স্মৃতিচারণা করতে করতে অনিন্দ্য বলেন, ‘ফুটবল যে শুধু ফুটবল নয়, ওটা একটা ম্যাজিক সেটা আমায় শিখিয়েছিলেন দিয়েগো মারাদোনা। নীল-সাদা রঙের দশ নম্বরের জার্সি পরা একটা বেঁটেখাটো লোক। মাঠে যখন দাঁড়িয়ে থাকত, তখন অন্য কারো দিকে আর চোখ পড়তো না। ফুটবল দুনিয়ায় যখন একচেটিয়া আধিপত্য বিস্তার করেছিল ব্রাজিল, এমনকি ব্রাজিলের নামে যখন গোটা কলকাতা সবুজ-হলুদ রঙের পতাকা ওড়াতে ব্যস্ত ছিল, ঠিক তখন উল্টোদিকে থাকা এই ছোটখাটো লোকটা মাঠে যখন নামতো, তখন অবিস্মরণীয় কিছু ঘটে যেতে পারত, এমনটা কিন্তু তুখোড় ব্রাজিল ভক্তরাও ভাবত। পেলেকে আমরা চোখের সামনে খেলতে দেখিনি। আমাদের মারাদনা ছিল। তাই ছিয়াশির বিশ্বকাপের সময় আমরা নিশ্চিতভাবে জানতাম যতই জিকো, সক্রেটিস থাকুক না কেন, আমাদের একটা মারাদনা আছে। যে যে কোনও অসম্ভবকে সম্ভব করে তুলতে পারে।
এর পাশাপাশি মারাদোনার জীবনযাত্রা নিয়েও শেষ মুহূর্তে মন্তব্য করেছেন অনিন্দ্য। তিনি বলেছেন, মারাদনা আর্জেন্টিনার যে প্রদেশে বড় হয়েছেন, সেখানে নেশা করা স্বাভাবিক একটা দস্তুর। তাই যেসব বিতর্কে মারাদোনাকে জড়িয়ে ফেলা হয়েছিল, সেসব নিয়ে আমি কিছুই বলব না। মানুষের জীবনে ভাল-মন্দ, খানা-খন্দ, উঁচু-নিচু থাকতেই পারে। তবে তিনি যত বিতর্কে জড়িয়েছেন, আমার ততই তাকে ভাল মানুষ বলে মনে হয়েছে। মনে হয়েছে মানুষটা ভীষণ রিয়েল। মারাদোনা যেন সবকিছুর ঊর্ধ্বে ফুটবল ঐশ্বরিক ক্ষমতাকে রেখে গিয়েছেন। মারাদোনার আর যা কিছুই থাকুক না কেন, আর যা কিছু নিয়েই তাকে বিতর্ক হোক না কেন, তার কিন্তু একটা বাঁ পা ছিল। আর সেই বাঁ পায়ের ঈশ্বর ছিলেন মারাদোনা। তাঁর চলে যাওয়া আসলে তাঁকে অমরত্ব দিয়ে গেল। তিনি যেখানেই থাকুন না কেন, আমি জানব আমার ফুটবলের ঈশ্বর সব সময় আমার মধ্যে বেঁচে রয়েছে।’ এভাবেই মারাদোনাকে স্মৃতিচারণা করেন চন্দ্রবিন্দুর অনিন্দ্য।