কৌশিক পোল্ল্যে: পাড়াগ্রামের আদিবাসী মেয়ে চাঁদমণি, আর পাঁচটি সাধারন মেয়ের মতোই কাটছিল তার জীবন। গলায় ছিল ঈশ্বরপ্রদত্ত গানের প্রতিভা। সেই ক্ষমতাকে সাক্ষী রেখে এক শিক্ষকের প্রচেষ্টায় নেহা কক্করের ‘ও হামসফর’ গানটি গেয়েই ফেলল সারদেশ্বরী কন্যা বিদ্যাপীঠের দশম শ্রেণীর ছাত্রী চাঁদমণি। ব্যাস এরপরই হয়ে গেল ম্যাজিক, রাতারাতি সেই গান হয়ে গেল ভাইরাল, সোশ্যাল মিডিয়ায় রীতিমতো সেনসেশন হয়ে উঠল দরিদ্র ঘরের বড়ো মেয়েটি, তারপরে রয়েছে আরও দুটি বোন।
দারিদ্র্যতা ও অভাব ছিল তাদের সংসারের নিত্য সঙ্গী। তিনি বোনের মধ্যে চাঁদমণিই বড়। দশ বছর আগে তার বাবার মৃত্যুতে সংসারের অবস্থা একেবারে ভেঙে পড়ে। সংসারের হাল ধরতে মায়ের সঙ্গে মাঠে গিয়ে ধানচাষের কাজে হাত লাগাতো মেয়েটি। পরিবারের সকলেই দুবেলা দুমুঠো খাবারও পেতেন না ঠিকমতো। অভাবের মধ্য দিয়েই চলছিল মেয়েটির পড়াশোনা।
ইটাচুনা গ্রাম পঞ্চায়েতের মুল্টি গ্রামের বাসিন্দা চাঁদমনি হেমব্রম সারদেশ্বরী কন্যা বিদ্যাপীঠের দশম শ্রেনীর ছাত্রী। ছোট থেকেই গান ওর মনকে টানে, মিউজিক স্টিটেমে চলা গান শুনে ও সারাক্ষন গুনগুন করত কিন্তু পয়সার অভাবে গান শেখার সৌভাগ্য হয়নি চাঁদমণির, তা বলে প্রতিভা কি কোনোদিন থেমে থাকতে পারে। আদিবাসী মেয়েটির উপর নজর পড়ল স্কুলের শিক্ষক চিরঞ্জিত ধীবরের। চাঁদমণির রেকর্ড করা গান নিজের ফেসবুকে শেয়ার করার পরই, বলিউড থেকে চাঁদমণির জন্য অফার আসতে শুরু করে।
পাঞ্জাবের বিখ্যাত শিল্পী আয়শান আদ্রির সংগীত পরিচালনায় মুক্তি পেতে চলেছে ফুলমণির প্রথম গান ‘জুদাইয়া বে’। গানটি কোনো বড় মিউজিক কোম্পানি ও টিভি চ্যানেল থেকে প্রোমোট করা হবে। এর পাশাপাশি ইন্ডিয়ান আইডল এর ১২ তম সিজনটিতে চাঁদমণির অংশগ্রহনের জন্য আমন্ত্রন এসেছে বলে জানিয়েছেন চিরঞ্জিতবাবু। সবমিলিয়ে আদিবাসী মেয়েটির জীবন রূপকথার গল্পের মতোই বদলে গেল বটে।