শ্রেয়া চ্যাটার্জি – ২০১২, ১৬ ডিসেম্বরে দিল্লিতে চলন্ত বাসে ঘটে যায় সেই দুর্ঘটনা। যার প্রতিবাদে গোটা ভারতবর্ষে আগুন জ্বলে উঠেছিল। ২৩ বছরের এক যুবতীর আসল নাম জ্যোতি সিং পান্ডে, ওরফে নির্ভয়া। পুরুষ বন্ধু অন্দ্র প্রতাপ পান্ডের সাথে একটি রাত্রিবেলা একটি সিনেমা দেখে দুই জনের ফিরছিলেন বাসে করে। এ সময় ঘটে যায় সেই দুর্ঘটনা, পুরুষ বন্ধুটিকে গণপিটুনি দেওয়ার পরে সে যখন বেশ কাহিল হয়ে পড়েছে, সেই সুযোগে মানুষরূপী পশুর দল ঝাঁপিয়ে পড়ে এই মেয়েটির উপর। সাথে ছিলেন বাসের চালক ও, সবমিলিয়ে ৬ জন মিলে গণধর্ষণ চালাতে থাকে। উত্তরপ্রদেশের বালিয়া জেলার একটি ছোট গ্রামের কৃষক পরিবারের মেয়ে জ্যোতি। গণধর্ষণের পরে অসুস্থ জ্যোতিকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। মেয়েকে বাঁচিয়ে তোলার জন্য বাবা জমি বিক্রি করে দেন। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি।
১৯ ডিসেম্বর পাঁচবার অস্ত্রপ্রচার হয়, ২১ ডিসেম্বর একটি মেডিকেল কমিটি গঠন করা হয়। শরীরের ভেতরে রক্তক্ষরণ, জ্বর এবং সারা অঙ্গে ইনফেকশন ছড়িয়ে পড়েছিল। ২৬ শে ডিসেম্বর তাকে সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে পাঠানো হয়। ২৭ শে ডিসেম্বর পাঠানো হয় সিঙ্গাপুরে। ২৯ শে ডিসেম্বর সব চেষ্টাকে হারিয়ে দিয়ে জ্যোতি চলে গেলেন। এ তো গেল জ্যোতির লড়াই। এরপরে শুরু হল জ্যোতির মায়ের লড়াই। যতদিন না দোষীরা সাজা পাচ্ছে ততদিন মেয়ের কথা ভেবে এই মানুষটি লড়াই করে গেছেন। এই ভয়ঙ্কর ঘটনার পাঁচ দিনের মধ্যেই সকল দোষীদের গ্রেফতার করা হয়। তবে ২০১৩ সালের ১১ ই মার্চ একজন আসামি রাম সিং আত্মহত্যা করেন। আরেকজন আসামি মোঃ আফরোজকে নাবালক হওয়ার দরুন তাকে সংশোধনাগারে পাঠানো হয়। পড়ে রইলেন বাকি চারজন।
হাইকোর্ট থেকে মৃত্যুদন্ড নির্দেশ দেওয়া হলেও তারা বারবার আবেদন করেন তাদের মৃত্যুদণ্ড যেন খারিজ করা হয়। অক্ষয় ঠাকুর, বিনয় শর্মা, মুকেশ সিং, পবন গুপ্ত এই চারজন দোষী কে শেষ পর্যন্ত ২০২০ সালের ২০ শে মার্চ ভোর ৫বেজে ৩০ মিনিটে ফাঁসিতে ঝোলানো হয়। ৪ জনের মৃত্যুতে গোটা ভারতবর্ষ আনন্দের হাসি হেসেছিল। সেদিনের সেই অভিশপ্ত দিনটি ছিল ১৬ ই ডিসেম্বর। যেদিন শেষবারের মত জ্যোতির সঙ্গে দেখা হয়েছিল মা আশা দেবীর। জ্যোতির পাশের সকলে ছিলেন জ্যোতি ওরফে নির্ভয়ার মৃত্যুর পরে সকলে গোটা ভারতবর্ষজুড়ে মোমবাতি মিছিল করেছিলেন। এক বাক্যে প্রত্যেকে ধর্ষকদের মৃত্যুদণ্ড চেয়েছেন। কিন্তু মা হয়ে একা এতদিন লড়াই করে যাওয়া মুখের কথা নয়। মেয়েকে শেষ দেখেছিলেন হসপিটালে, রক্তাক্ত অবস্থায়। জ্যোতি সেখানে যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে। সবকিছু স্মৃতিকে মাথায় রেখে বারবার আদালতের দ্বারস্থ হওয়া। আইনজীবীদের প্রশ্নের মুখোমুখি হওয়া। মানসিকভাবে দৃঢ় না হলে বোধহয় এতদূর পদক্ষেপ মা হিসেবে নেওয়া যেতনা। অবশেষে শাস্তি পেয়েছে দোষীরা। মেয়ের ফটো জড়িয়ে কেঁদে বলেছেন, শেষ পর্যন্ত বিচার পাওয়া গেল। আজ মাতৃ দিবসের দিনে এমন লড়াকু মাকে স্যালুট জানাতে হয়।