‘বহু বিজেপি বিধায়ক আমার সাথে যোগাযোগ রাখছেন’, দল ছাড়ার পরেই বিস্ফোরক মুকুল
ইতিমধ্যেই বিজেপির বর্তমান বেসুরো নেতাদের সঙ্গে মুকুল রায়ের যোগাযোগ হয়েছে বলে সূত্রের খবর
অতিসম্প্রতি বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে যোগদান করেছেন পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে অত্যন্ত হেভিওয়েট নেতা মুকুল রায়। তৃণমূলে যোগদান করার পর থেকেই মুকুল রায়ের প্রথম অভিযোগ, বিজেপি নেতারা নাকি তার স্ত্রী এর যথাযথ খেয়াল নেননি। প্রসঙ্গত তার স্ত্রী বর্তমানে করোনা আক্রান্ত হয়েছেন এবং তিনি বর্তমানে একমো সাপোর্টে আছেন। হাসপাতাল সূত্রে খবর, মুকুল রায়ের স্ত্রী অত্যন্ত কঠিন পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন এবং তার মাল্টি অর্গান ফেইলিয়ার রয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এটি এয়ার এম্বুলেন্স এর মাধ্যমে তাকে চেন্নাইয়ে চিকিৎসার জন্য পাঠানোর প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে খবর।
অন্যদিকে কিছুদিন আগে মুকুল রায় পুত্র শুভ্রাংশু রায় এর সাথে দেখা করতে গিয়েছিলেন তৃণমূলের বর্তমান সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। সেখানে গিয়ে তার মায়ের ব্যাপারে দীর্ঘক্ষন কথা বলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। এছাড়াও জানা যাচ্ছে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজেও মুকুল রায় কে ফোন করে তার স্ত্রী এর ব্যাপারে খোঁজখবর নিয়েছেন। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, মমতা এবং অভিষেকের এই খোঁজখবর নেওয়ার কারণে মুকুল রায়ের মন বিজেপি থেকে তৃণমূলের দিকে ঘুরেছে।
তৃণমূলে ফিরে মুকুল রায় সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে বলেছেন, “পুরনো বন্ধুদের সাথে দেখা করে এবং পুরনো দলে ফিরে অত্যন্ত ভালো লাগছে। আমি এখনো অনুতপ্ত যে আমি গেরুয়া শিবিরে যোগদান করেছিলাম এবং কিছুদিন পরেই বুঝতে শুরু করেছিলাম গেরুয়া পার্টি করা আমার দ্বারা সম্ভব নয়। আমার বাকি যা বক্তব্য আমি আপনাদের কাছে লিখিত ভাবে পেশ করবো।”
শুভ্রাংশু কোন কথা না বললেও তার আচরণের মাধ্যমে বোঝা যাচ্ছিল তিনি অনেক দিন ধরেই তৃণমূলের ফেরার জন্য পরিকল্পনা গ্রহণ করে নিয়েছিলেন। ছিল শুধুমাত্র সময়ের অপেক্ষা। এদিন বাবা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার পরেই ছেলে তাতে সায় দিয়ে তৃণমূল কংগ্রেসের ফিরে এলেন। অন্যদিকে বিজেপির ক্ষেত্রে মুকুল রায়ের অত্যন্ত বড় একটি ধাক্কা বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। জানা যাচ্ছে মুকুল রায় এখনো পর্যন্ত বিজেপির সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি পদটি থেকে পদত্যাগ গ্রহণ করেননি। যখন নারোদা মামলায় তদন্ত চলছে সেই সময় তিনি বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে যোগদান করেছেন, যেখানে মুকুল রায় নিজেও একজন দোষী হিসেবে চিহ্নিত। তার পাশাপাশি কৃষ্ণনগর উত্তর আসন থেকে বিজেপি টিকিটে তিনি জয়লাভ করেছেন এবারের নির্বাচনে।
কিন্তু সবথেকে উল্লেখযোগ্য বিষয়টি হলো, মুকুল রায় বারবার বলেছেন বেশ কয়েকজন বিজেপি নেতা এবং বিধায়ক তার সাথে যোগাযোগ রাখছেন। সংশ্লিষ্ট মহলের ধারণা তৃণমূল থেকে যারা বিজেপিতে গিয়েছিলেন সেরকম বেশ কয়েকজন নেতা সম্প্রতি বিজেপির প্রতি বেসুরো হয়ে উঠেছেন। তারাই আবার মুকুল রায়ের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন না তো? থেকে যাচ্ছে প্রশ্ন চিহ্ন। কিন্তু তার মধ্যেই, নাম না করে শুভেন্দু অধিকারী কে উদ্দেশ্য করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, “যে সমস্ত গদ্দাররা এবং মীরজাফরেরা শুধুমাত্র টাকার জন্য আমাদের পিঠে ছুরি মেরেছে তাদেরকে আমরা কোনভাবেই আবার দলে যুক্ত করবো না।” তার সাথেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঘোষণা করে দিলেন, মুকুল রায় আবারো তৃণমূল কংগ্রেস দলে পদ ফিরে পাবেন। যদি ব্যাপারটি এখনো পরিষ্কার নয়, যে মুকুল রায় আবার দলের সেকেন্ড-ইন-কমান্ড পদটি পাবেন নাকি অন্য কোন পথ তাকে দেওয়া হবে। কারণ বর্তমান হিসেব অনুযায়ী কিন্তু তৃণমূলের বর্তমান সেকেন্ড-ইন-কমান্ড হলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। তাকে সরিয়ে সে জায়গায় মুকুল আসবেন নাকি তাকে অন্য কোন পদ দেওয়া হবে সেই নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে তৃণমূলের অন্দরে।