৮ বছর আগে বাণিজ্যনগরীর বুকে শক্তি মিল চত্বরে গণধর্ষণের শিকার হয়েছিলেন এক তরুণী চিত্র সাংবাদিক৷ সেই ঘটনায় ৩ অভিযুক্তকে আগেই দোষী সাব্যস্ত করেছিল বোম্বে আদালত ৷ এরপর তিন দোষীদের মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছিল। বৃহস্পতিবার বম্বে হাই কোর্ট মৃত্যুদণ্ডের সাজা রদ করে এই তিন দোষীকে আমৃত্যু সশ্রম কারাদণ্ডের সাজা ঘোষণা করল। বম্বে হাই কোর্টের মন্তব্য, জনতার ভাবাবেগ অনুযায়ী আইনি ব্যবস্থা চলতে পারে না।
তবে ২০১৪ সালে নিম্ন আদালত এই গণধর্ষণ মামলায় তিন জনকে দোষী ঘোষণা করে ফাঁসির নির্দেশ দিয়েছিল। এর আগেও ধর্ষণে অভিযুক্ত ছিল এই তিন জন। তাই এই তিনজনের অপরাধ পুনরাবৃত্তি করার দায়ে তাঁদের কোনওরকম ছাড় দিতে চায়নি নিম্ন আদালত। সেই নির্দেশের বিরোধিতা করে মৃত্যুদণ্ড বাতিলের আর্জি জানিয়ে বম্বে হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন অভিযুক্ত পক্ষের আইনজীবী। সেই শুনানিতে এদিন সাজা কমিয়ে যাবজীবন করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এদিন বম্বে হাই কোর্টের বিচারপতিরা নিজেদের রায়ের পক্ষে বলেন, “শক্তি মিল গণধর্ষণ কাণ্ড নাড়িয়ে দিয়েছিল গোটা সভ্য সমাজকে। একজন নির্যাতিতা শুধু শারীরিক নয় পাশাপাশি মানসিক ভাবেই ক্ষতবিক্ষত হন। যা মানবাধিকারের উপর বড় আঘাত। তবে মৃত্যুদণ্ড শেষ ‘অস্ত্র’, যা ব্যতিক্রমী ক্ষেত্রেই দেওয়া হয়। জনতার ভাবাবেগের উপর নির্ভর করে বিচার ব্যবস্থা চলতে পারে না।”
তবে এই অপরাধীরা যাতে আর কখনওই সমাজের মূলস্রোতে ফিরতে না পারে, তার ব্যবস্থা করেছেন মুম্বই হাইকোর্টের বিচারপতিদের বেঞ্চ। দোষীদের আমৃত্যু কারাগারের চার দেওয়ালের মধ্যেই নিজের জীবন কাটাতে হবে। তারা প্যারোলেও ছাড়া পাবেন না বলে জানানো হয়েছে। বম্বে হাই কোর্টের মন্তব্য, “এই তিন দোষী আর কখনওই সমাজের মূলস্রোতে ফিরতে পারবে না”।
২০১৩ সালের ২২ আগস্ট কাজের সূত্রে অফিসের এক সহকর্মীর সঙ্গে মুম্বইয়ের পরিত্যক্ত শক্তি মিল-চত্বরে গিয়েছিলেন বাইশ বছরের তরুণী চিত্র সাংবাদিক৷ সেখানে তাঁর সঙ্গীকে মারধর করে বেঁধে রাখা হয় ৷ এরপর নির্মমভাবে গণধর্ষণের শিকার হন তরুণী স্বয়ং৷ চিত্র সাংবাদিকের অভিযোগ পেয়ে বিজয়, কাসেম, সেলিমের পাশপাশি সিরাজ রহমান এবং আরও এক নাবালকের খোঁজ শুরু করেন পুলিশ।
এই ঘটনা প্রকাশ্যে আসার পর একজন অষ্টাদশী টেলিফোন অপারেটরারের সাহায্যে অভিযোগ জানান। তিনি বলেন, চিত্র সাংবাদিকের ঘটনার মাসখানেক আগে তিনিও শক্তি মিল চত্বরেই গণধর্ষণের শিকার হয়েছিলেন। এরপর দু’টি মামলারই তদন্ত চলে একই সঙ্গে। টেলিফোন অপারেটরের গণধর্ষণেও বিজয়, কাসেম, সেলিম যুক্ত বলে জানা যায়। পরে পাঁচ অভিযুক্ত দোষী সাব্যস্ত হয়। তাদের মৃত্যুদণ্ডও হয়। তবে এদিন সেই সাজা থেকে সরে আসল বম্বে হাই কোর্ট। দোষীদের আমৃত্যু সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়।