ক্রিকেট মাঠে ভারত-পাকিস্তানের লড়াই মানেই বাড়তি উত্তেজনা। তবে এবারের এশিয়া কাপের আগে সেই ম্যাচ ঘিরে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক ও আইনি বিতর্ক। ২০২৫ সালের এশিয়া কাপে দুই দল একই গ্রুপে থাকায় ১৪ সেপ্টেম্বর দুবাইয়ে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা গ্রুপ পর্বের ম্যাচটি। কিন্তু ম্যাচের আগে পুনের সমাজকর্মী কেতন তিরদকর সুপ্রিম কোর্টে একটি আবেদন দাখিল করেছেন, যেখানে তিনি ম্যাচটি বাতিলের দাবি তুলেছেন।
আবেদনের যুক্তি কী?
আবেদনকারীর দাবি, সাম্প্রতিক পহেলগাম সন্ত্রাসী হামলায় ২৬ জন প্রাণ হারানোর পর ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে কোনো রকম খেলাধুলা জাতীয় স্বার্থের পরিপন্থী। তার মতে, বন্ধুত্ব বা কূটনৈতিক সম্পর্কের প্রতীক হিসেবে ক্রিকেট ম্যাচ খেলা দেশের নিরাপত্তা ও মর্যাদার ক্ষতি করবে। আবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, বিসিসিআইয়ের এই সিদ্ধান্ত ভারতীয় সংবিধানের ২১ অনুচ্ছেদ লঙ্ঘন করে। ওই অনুচ্ছেদ অনুযায়ী প্রতিটি নাগরিকের জীবন, ব্যক্তিগত স্বাধীনতা, মর্যাদাপূর্ণ জীবনযাপন এবং নিরাপদ পরিবেশের অধিকার রয়েছে। পাকিস্তান-সমর্থিত সন্ত্রাসবাদে যখন প্রতিনিয়ত সেনা ও বেসামরিক নাগরিক নিহত হচ্ছেন, তখন খেলাধুলার মাধ্যমে বন্ধুত্ব প্রদর্শন অগ্রহণযোগ্য বলে আবেদনকারীর দাবি।
জনমত ও বিতর্ক
এই আবেদন ঘিরে সোশ্যাল মিডিয়ায় তুমুল আলোচনা শুরু হয়েছে। একদল মানুষ সমাজকর্মীর যুক্তিকে সমর্থন করে বলেছেন, জাতীয় নিরাপত্তা সর্বাগ্রে রাখা উচিত। অন্যদিকে, অনেকেই মনে করেন খেলাধুলাকে রাজনীতি থেকে আলাদা রাখা জরুরি। ক্রিকেট কেবল একটি খেলা, এবং খেলোয়াড়দের পরিশ্রম ও ভক্তদের আবেগকে এভাবে প্রশ্নবিদ্ধ করা উচিত নয়। ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ সবসময়ই বিশেষ গুরুত্ব বহন করে। মাঠে দুই দলের মুখোমুখি হওয়া মানেই কোটি দর্শকের চোখ টেলিভিশনে। এমন আবেগঘন পরিবেশে আইনি জটিলতা যুক্ত হওয়ায় বিতর্ক আরও উত্তপ্ত হয়েছে। এখন নজর সুপ্রিম কোর্টের রায়ের দিকে, যেখানে নির্ধারিত হবে এই ম্যাচ আদৌ অনুষ্ঠিত হবে কি না।
ভক্তদের আশা ও উত্তেজনা
আইনি বিতর্ক চললেও ক্রিকেটপ্রেমীদের মধ্যে রোমাঞ্চ কমেনি। ভারত ও পাকিস্তানের লড়াইকে সবসময়ই এক ঐতিহাসিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা হিসেবে দেখা হয়। বিশেষজ্ঞদের মতে, যদি ম্যাচটি অনুষ্ঠিত হয় তবে দুই দলের মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি প্রতিযোগিতা দেখা যাবে। বিশেষত দুবাইয়ের নিরপেক্ষ ভেন্যুতে এই ম্যাচ ভিন্ন মাত্রা পাবে।
তিনবার মুখোমুখি হওয়ার সম্ভাবনা
শুধু গ্রুপ পর্বই নয়, ২০২৫ সালের এশিয়া কাপে ভারত ও পাকিস্তান মোট তিনবার মুখোমুখি হতে পারে। গ্রুপ ম্যাচের পর যদি দু’দল সুপার-৪ পর্যায়ে পৌঁছায়, তবে আরও একবার খেলবে। আর যদি ভাগ্যের কারণে দু’দল ফাইনালে পৌঁছায়, তবে তৃতীয়বার প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে। ফলে ভক্তদের জন্য এশিয়া কাপ ২০২৫ হতে পারে এক বিশেষ রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা।
সব মিলিয়ে, ভারত-পাকিস্তান ম্যাচকে ঘিরে আইনি লড়াই এবং জনমতের বিভাজন এখন বড় আলোচনার বিষয়। সুপ্রিম কোর্টের রায়েই নির্ভর করছে ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম বহুল প্রতীক্ষিত ম্যাচটি আদৌ অনুষ্ঠিত হবে কি না। তবে একথা অনস্বীকার্য, মাঠে এই দুই দলের লড়াই দেখার জন্য কোটি ভক্তের চোখ এখনো অপেক্ষায় রয়েছে।














