নিউজপলিটিক্সরাজ্য

মুখ্যমন্ত্রী তাড়াননি, আমিও ছাড়িনি, দলবদলের জল্পনা উড়িয়ে দিয়ে জনসভা থেকে মন্তব্য শুভেন্দুর

Advertisement

সমস্ত হাইপ তুলছে মিডিয়া, তাই এই সম্পূর্ণ বিষয় এর দায় এটা তাদের ওপরই বর্তায়। এরকম ভাবেই মেদিনীপুরের রামনগরের অরাজনৈতিক জনসভা থেকে কটাক্ষ ছুড়ে দিলেন শুভেন্দু অধিকারী। তৃণমূল দলের উদ্দেশ্যে তিনি বলেছেন, মুখ্যমন্ত্রী তাকে তাড়িয়ে দেন নি, এবং তিনি দল ছেড়ে যাননি। তার এই কথাতেই স্পষ্ট তিনি এই মুহূর্তে দল ছাড়ার কোনো সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন না। শুভেন্দু অধিকারীকে নিয়ে দলবদল এর জল্পনা বেশ কিছুদিন ধরে একেবারে শিরোনামে থাকলেও এদিন সমস্ত সম্ভাবনার উপরে জল ঢেলে দিলেন শুভেন্দু নিজে।

অন্যদিকে দমদমের তৃণমূল সাংসদ সৌগত রায় শুভেন্দু অধিকারীর দলে থাকা নিয়ে অত্যন্ত আশাবাদী। তিনি বলছেন, স্থান, কাল, পাত্র শুভেন্দু বিলক্ষণ জানেন। তাই তিনি দলকে বিসর্জন দিয়ে কোন কাজ করবেন না। মানুষের সাহায্য করার পাশাপাশি তিনি আন্দোলনেও অংশগ্রহণ করে থাকেন। বিজেপির উদ্দেশ্যে কটাক্ষ করে সৌগত রায় বললেন, বিদ্যাসাগরের জেলার লোক এতটা অনৈতিক হন না। তাই অরাজনৈতিক মঞ্চ থেকে দলবদল এর ব্যাপারে জানানো তাদের কর্ম না।

অন্যদিকে মিডিয়াকে কটাক্ষ করে শুভেন্দু অধিকারী বলেন, দলবদল এর সমস্ত জল্পনা তৈরি করেছে মিডিয়া। ইন্দিরা গান্ধীর জন্মদিনে তার মূর্তিতে মাল্যদান নিয়ে মিডিয়া ভাববে, তিনি নাকি আবার দল বদল করছেন। টিআরপি নেওয়ার জন্য মিডিয়া যা ইচ্ছা করতে পারে, কিন্তু তিনি না। তিনি আরো জানিয়েছেন, নন্দীগ্রামের মঞ্চ থেকে যেমন রাজনৈতিক কথা বলা যায়না, তেমনি মন্ত্রিসভার সদস্য থেকেও এরকম রাজনৈতিক কথা বলা যায়না। সমস্ত জল্পনা তৈরি করেছিল মিডিয়া, তাই এই দায়িত্বটা সম্পূর্ণ তাদের।

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কে উদ্দেশ্য করে তিনি বললেন, মুখ্যমন্ত্রী আমাকে তাড়িয়ে দেন নি, তাই তিনিও ছেড়ে যাননি। এদিন শুভেন্দু অধিকারী সভা মঞ্চ থেকে বাংলার মানুষের উদ্দেশ্যে বার্তা দিয়ে বললেন, বহুদলীয় গণতন্ত্রে মতবিরোধ হয়। বিভেদ, বিচ্ছেদ সবকিছু দেখা যায়। কিন্তু যতক্ষণ না দলের সুপ্রিমো তাকে কোনো নির্দেশ দিচ্ছেন, ততক্ষণ তিনি কোনো কথা বলবেন না। শুভেন্দু অধিকারী আরো বললেন, তিনি দলের একজন প্রাথমিক সদস্য এখনো পর্যন্ত। পাশাপাশি, তিনি মন্ত্রিসভার সদস্যও বটে। তাই, মুখ্যমন্ত্রী নিজে তাড়িয়ে দেওয়ার আগে তিনি কোনো মন্তব্য করবেন না।

আম্ফান ঝড়ের প্রসঙ্গ টেনে শুভেন্দু বললেন, ঝড়ের সময় তিনি দীঘায় ছিলেন। সকলে ভেবেছিলেন, ঝড় তাকে উড়িয়ে নিয়ে যাবে। কিন্তু সে রকম কিছু হয়নি। উল্টে তার ওজন বেড়ে গেছে, তিনি নন্দীগ্রাম করা লোক, এই ঝড় উড়িয়ে নিয়ে যেতে পারবে না। করোনা হোক কিংবা আম্ফান ঝড়, শুভেন্দু অধিকারী সবসময় মানুষের পাশে থেকেছেন। তিনি আরো বলেছেন, তিনি ঘরে নন, মাঠে থাকেন। তিনি বসন্তের কোকিল নয় বলেও মন্তব্য করেছেন শুভেন্দু। তিনি আরো জানান তার সাথে মানুষের আত্মিক পরিচয় রয়েছে। এভাবেই আজ দল বদলের সমস্ত জল্পনা উড়িয়ে দিলেন তৃণমূলের এই হেভিওয়েট নেতা।

এই জনসভার পরে তৃণমূলের তরফে জানা গিয়েছে, তৃণমূলের দুই সাংসদ সৌগত রায় এবং সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় শুভেন্দুর সাথে বৈঠকে বসবেন। ভাইফোঁটার দিন শুভেন্দুর সাথে প্রথম বৈঠক হয়েছিল। সেই রিপোর্ট সরাসরি পৌঁছেছে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে। সেখানে শুভেন্দু অধিকারী প্রশান্ত কিশোর এবং অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছিলেন বলে জানা গিয়েছে। সেই অভিযোগ খতিয়ে দেখছে তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্ব। এই অভিযোগ সম্পূর্ণ রূপে খতিয়ে দেখার পরে দ্বিতীয় বৈঠক হতে চলেছে শুভ্যেন্দুর সাথে। এমনটাই খবর তৃণমূল সূত্রে।

তবে এই ফাঁকে, আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনের জন্য হালকা প্রচার পর্ব সেরে ফেললেন শুভেন্দু অধিকারী। সমবেত জনতার উদ্দেশ্যে শুভেন্দুর মন্তব্য, পান্তা খাওয়া, গামছা পরা, গ্রামের ছেলেটা সমর্থন পাবে তো? জনগণের থেকে একটাই উত্তর এলো, হ্যাঁ! তবে, শুভেন্দু এই দিনের জনসভা থেকে আরও জানিয়ে দিলেন, তিনি পরবর্তী সময় লাগাতার কর্মসূচি নিচ্ছেন। অতএব বর্তমানে বেশ স্পষ্ট, শুভেন্দু এখনই দল ছাড়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করছেন না।

Related Articles

Back to top button