শ্রেয়া চ্যাটার্জি – এই মানুষগুলো হয়তো জানেনই না লকডাউন এর মানে কি? কিংবা সামাজিক দূরত্ব ঠিক কাকে বলে? আর কেনই বা এত কিছু মানা হচ্ছে? হয়তো তাদের কাছে স্পষ্ট নয়, কারণ তাদের কাছে এটা ২১ দিনের যুদ্ধ নয়, তারা প্রতিদিনই যুদ্ধ করে বাঁচে অভাবের সাথে। পরনে কাপড় নেই, দুবেলা দুমুঠো ভাত জোটে না। তবুও জল আনতে যাওয়ার সময় সামাজিক দূরত্ব তারা বজায় রেখেছে। নিজেদের আন্দাজ মতোই বেশ খানিকটা দূরত্বে চক দিয়ে গোল গোল দাগ কেটে দাঁড়িয়ে রয়েছে তারই মাঝখানে।
সবকিছুর জন্য শিক্ষার প্রয়োজন হয় না, শহরে মফস্বলে আমরা অনেক শিক্ষিত মানুষকে দেখছি, যারা লকডাউন মেনে নিচ্ছেন না। সামাজিক দূরত্ব মানছেন না। এই কদিনের ছুটিকে তারা বেশ বাইরে বেরিয়ে ঘুরে বেড়াতে চাইছেন এদিক থেকে ওদিক। এই মানুষগুলোকে দেখুন, যারা কারুর না কারুর কথা শুনে এই বিষয়টি মেনে নিয়েছে। আমাদের শিক্ষিত সম্প্রদায়ের বোধ হয় এদের থেকে সত্যিই কিছু শেখার আছে। এদেরকে রাস্তাঘাটে দেখলে যে সমস্ত শিক্ষিত সম্প্রদায় নাক সিঁটকে তথাকথিত নিজেদেরকে বাবু বলে ভাবেন, তারা আজ এই ছবিটা দেখে কিছু শিখুন।
দুপাতা পড়াশোনা করলেই আপনি একজন দেশের সচেতন নাগরিক হবেন এ কথা ভাবা আপনার ভুল। সকালবেলা উঠেই মনে হচ্ছে বাজারের ব্যাগটা নিয়ে মাস্ক না পড়েই একটুখানি বাজারের মধ্যে ঠাসাঠাসি ভাবে ঘুরে ঘুরে বাজার করলেই আপনি একজন নাগরিক হবেন তা কিন্তু নয়। ভারতবর্ষের নাগরিক আপনি থাকবেন কিন্তু আপনি দেশের প্রতি কতটা সচেতন বা দেশকে নিয়ে আপনি কতটা চিন্তিত তা কিন্তু আপনারই ব্যবহারের মাধ্যমে প্রকাশ পাবে না। তখনই আপনাকে এই তথাকথিত অশিক্ষিত মানুষগুলোর নিয়মকে মেনে নিতে হবে।
আসুন আমরা সকলে মিলে যুদ্ধে নামি, করোনা ভাইরাস আক্রমনকে আমাদের যুদ্ধ বলেই মনে করতে হবে। ধনী-দরিদ্র, শিক্ষিত-অশিক্ষিত জাতি, ধর্ম নির্বিশেষে আমরা লকডাউন মেনে নিই এবং সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখি। করোনা ভাইরাস কোন জাত, ধর্ম দেখে থাবা বসাচ্ছে না। যখন সে তার ভয়ঙ্কর রূপ নিয়ে প্রবেশ করছে তখন শহর থেকে গ্রাম ধুলিস্যাৎ করে দিচ্ছে। তাই আর নয় এবার সময় এসেছে আমাদের প্রত্যেকের সচেতন হয়ে ওঠার।