রাজ্যের হাজার হাজার অস্থায়ী কর্মীর জন্য সুপ্রিম কোর্ট দিল এক যুগান্তকারী রায়। পশ্চিমবঙ্গ সর্বশিক্ষা মিশনের অধীনে কর্মরত প্যারা-টিচার, শিক্ষাবন্ধু ও শিক্ষামিত্রদের দীর্ঘদিনের আর্থিক বৈষম্যের বিরুদ্ধে এই রায় নতুন দিশা দেখাল। দেশের সর্বোচ্চ আদালত জানিয়ে দিয়েছে, কলকাতা হাইকোর্টের রায় বহাল থাকবে এবং অস্থায়ী কর্মীদের সমস্ত আর্থিক সুযোগ-সুবিধা প্রদান করতে হবে।
মামলার পটভূমি
পশ্চিমবঙ্গ সর্বশিক্ষা মিশনের অধীনে বহু বছর ধরে কাজ করে আসছেন হাজার হাজার অস্থায়ী কর্মী। একই ধরনের কাজ করলেও তাঁদের আর্থিক সুবিধা ছিল স্থায়ী কর্মীদের তুলনায় অনেক কম। এই বৈষম্যের বিরুদ্ধে ক্ষোভ জমতে জমতে শেষ পর্যন্ত কর্মীদের একাংশ আদালতের শরণাপন্ন হন। ২০২৫ সালের ৪ঠা এপ্রিল, কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি রাজশেখর মান্থা এবং বিচারপতি অজয় কুমার গুপ্তার বেঞ্চে এক ঐতিহাসিক রায় দেওয়া হয়। হাইকোর্ট স্পষ্ট জানায়, অস্থায়ী কর্মীদেরও স্থায়ী কর্মীদের মতো আর্থিক সুবিধা দিতে হবে। সেই সঙ্গে ২০১১ ও ২০১২ সালে সর্বশিক্ষা মিশনের জারি করা দুটি স্মারকলিপিকে আদালত “অবৈধ, স্বেচ্ছাচারী এবং বৈষম্যমূলক” বলে অভিহিত করে।
সুপ্রিম কোর্টের অবস্থান
কলকাতা হাইকোর্টের এই রায়কে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে সর্বশিক্ষা মিশন সুপ্রিম কোর্টে বিশেষ অনুমতি পিটিশন (SLP) দায়ের করে। মিশনের দাবি ছিল, হাইকোর্টের রায় কার্যকর হলে রাজ্যের উপর বিপুল আর্থিক চাপ তৈরি হবে। কিন্তু বিচারপতি সঞ্জয় কুমার ও বিচারপতি সতীশ চন্দ্র শর্মার বেঞ্চে শুনানির পর সর্বোচ্চ আদালত জানায়, হাইকোর্টের রায়ে হস্তক্ষেপ করার মতো কোনো বৈধ কারণ নেই। ফলে হাইকোর্টের রায়ই কার্যকর থাকবে এবং অস্থায়ী কর্মীদের প্রাপ্য সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে।
রায়ের প্রভাব
এই রায় কার্যকর হলে অস্থায়ী কর্মীরা পাবেন একাধিক গুরুত্বপূর্ণ সুবিধা—
৬০ বছর পর্যন্ত চাকরির নিশ্চয়তা।
স্থায়ী কর্মীদের মতো বেতন ও ভাতা।
অবসরকালীন সমস্ত সুযোগ-সুবিধা।
এটি শুধু মামলাকারী কর্মীদের জন্য নয়, রাজ্যের হাজার হাজার অস্থায়ী কর্মীর জন্য এক বড় জয়। তবে, বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, অন্যান্য কর্মীদের একই ধরনের সুবিধা পেতে হলে হয়তো নতুন করে আদালতের দ্বারস্থ হতে হতে পারে।
সামাজিক ও প্রশাসনিক তাৎপর্য
সুপ্রিম কোর্টের এই রায় প্রমাণ করল যে, দীর্ঘ লড়াইয়ের পরেও ন্যায়বিচার সম্ভব। অস্থায়ী কর্মীদের ন্যায্য অধিকার স্বীকৃতি দেওয়া হলো আইনিভাবে। একই সঙ্গে এই রায় রাজ্য সরকারকে বাধ্য করবে তাদের নীতি পুনর্বিবেচনা করতে। আগামী দিনে অস্থায়ী কর্মীদের জন্য আরও সুরক্ষিত কর্মপরিবেশ গড়ে তোলার চাপ বাড়বে প্রশাসনের উপর।














