গৌরনাথ চক্রবর্ত্তী, পূর্ব বর্ধমান,৩ ফেব্রুয়ারী : যেন অসময়ে অকালবোধন। আপামর বাঙালি যখন শারদীয়ার উৎসবে মাতে তখন এগ্রামে দুর্গাপূজো হয় না। কিন্তু প্রকৃতির নিয়ম অনুযায়ী আকাশে পেঁজা মেঘ ভাসে, সবুজ মাঠে দোল খায় সাদা কাশের বন। ব্যতিক্রমী এই গ্রামটি হল কাটোয়ার আমূলগ্রাম। শরৎকালে এখানে হয় না দুর্গাপুজো। পরিবর্তে মাঘ মাসে দেবাসিন চন্ডীমাতার পুজো ঘিরে অকাল শারোদৎসবে মাতেন কাটোয়ার আমূল গ্রামের বাসিন্দারা। এই গ্রামে দ্বিতীয় কোনও দুর্গাপুজো করার বিধি নেই। দেবাসিন চন্ডীমাতার এই পুজোর সূচনা হয়েছিল পারিবারিক হিসাবেই। কিন্তু কালক্রমে এই পুজোই সর্বজনীন পুজোর চেহারা পেয়েছে। কাটোয়ার সিঙ্গি পঞ্চায়েতের অন্তর্গত প্রত্যন্ত এক গ্রাম আমুলগ্রাম। প্রায় ৫০০ পরিবারের বসবাস। এই গ্রামে প্রতিবছর মাঘ মাসের শুক্লপক্ষের নবমী তিথিতে হয় দেবাসিন চন্ডীমাতার পুজো।
প্রায় ৪০০ বছরের প্রাচীন এই দেবাসিন চন্ডীমাতার পুজো। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, আমূলগ্রামের ব্যানার্জ্জী পরিবার এই পুজোর সূচনা করেছিল। দেবাসিন চন্ডীমাতার পুজোয় দু’টি মূর্তি পাশাপাশি রেখে পুজো করা হয়। একটি আদি শিলামূর্তি। অপরটি মাটির প্রতিমা। পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, ব্যানার্জ্জী পরিবারের এক পূর্বপুরুষ স্বপ্নাদেশ পেয়ে আমূলগ্রামের পশ্চিমদিকে দেবাসিন নামে দিঘির জলের তলা থেকে দেবীর এই শিলামূর্তি উদ্ধার করেছিলেন। সেইবছর থেকে মাঘ মাসের শুক্লপক্ষের নবমী তিথি থেকে চারদিনের পুজো হয়ে আসছে।
দেবাসিন চন্ডীমাতার মাটির প্রতিমা বিচিত্র ধরনের। দেবীর ডানদিকে রয়েছে চারটি হাত আর বাঁদিকে ছ’টি হাত। তার মধ্যে ডানদিকের একটি ও বাঁদিকের দু’টি হাত বড়। বাকি সাতটি হাত তুলনামূলক ছোট। মাটির প্রতিমাটি অবশ্য প্রতিবছর নির্মাণ করা হয় না। শুধুমাত্র দেবীমূর্তির অঙ্গহানি হলে নতুন প্রতিমা নির্মাণ করতে হয়।
সপ্তমী থেকে নবমী এই তিন তিথির পুজো শেষ করতে হয় নবমীতেই। তবে একদিনের পুজো হলেও আচার মেনে উৎসব চলে চারদিনই। পুজো উপলক্ষে গ্রামে মেলা বসে। এই উৎসব ঘিরে আনন্দে মাতোয়ারা হন এলাকার সকল মানুষ।