কলকাতা: নজিরবিহীন আন্দোলনের জেরে এবার আদি গঙ্গায় টহলদারি বাড়াচ্ছে প্রশাসন। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বদলাচ্ছে মানুষের চাহিদা। আর বদলে যাচ্ছে প্রতিবাদের ভাষা, প্রতিবাদের পদ্ধতি। শিক্ষকদের (Teacher) অনেক ধরনের প্রতিবাদ আন্দোলন দেখেছে বাংলা। কিন্তু গতকাল, মঙ্গলবার (Tuesday) যা ঘটেছে, তা কার্যত নজিরবিহীন। আন্দোলনকারী শিক্ষকদের গন্তব্য ছিল মুখ্যমন্ত্রীর (Chief Minister) বাড়ি, আদি গঙ্গায় নেমে সাঁতরে রওনা দিয়েছিলেন তাঁরা।
এমন অভূতপূর্ব প্রতিবাদ এর আগে দেখেনি তিলোত্তমা। গতকাল সকাল সাড়ে ১০ টা নাগাদ আচমকাই এই অভাবনীয় ঘটনা ঘটে। পার্শ্ব শিক্ষকরা বুঝিয়েছিলেন আন্দোলনের জল কতদূর গড়াতে পারে। মঙ্গলবার সকাল ১০টা ৩০ নাগাদ আলিপুর জেলের পার্শ্বশিক্ষকদের একটি ছোট দল জমায়েত করে। দলে ছিলেন ৬ জন পার্শ্ব শিক্ষক। আলিপুর জেলের পাশাপাশি আরও একটি দল হাজির হয় আলিপুর পোস্ট অফিসের সামনে। দলদুটি পুলিশের চোখে ধুলো দিয়ে পৌঁছায় আদি গঙ্গার ধারে।
এরপর কেউ কিছু বুঝে ওঠার আগেই তাঁরা ঝাঁপ দেন গঙ্গায়!দেখা যায় গঙ্গায় ঝাঁপ দিয়ে সাঁতার দিতে শুরু করেছেন তাঁরা! হাতে প্ল্যাকার্ড, প্লাস্টিকে মোড়া। ততক্ষনে গঙ্গার পাড়ে পৌঁছে গিয়েছিল বিরাট পুলিশ বাহিনী। ঘটনার আকস্মিকতায় হকচকিয়ে যান তাঁরা। পরিস্থিতি সামাল দিতে তড়িঘড়ি ঘটনাস্থলে পৌঁছে গিয়েছিলেন কলকাতার পুলিশ কমিশনার সৌমেন মিত্র। অনেক অনুরোধে জল থেকে ওপরে উঠে আসেন পার্শ্ব শিক্ষকরা। গ্রেফতার করা হয় ৫ জন কে।
জল থেকে উঠেই হাউ হাউ করে কেঁদে ফেলেন রুনু দত্ত নামে এক শিক্ষামিত্র। বলেন, “সাত বছর ধরে সংসার ডুবে গিয়েছে। বেতন নেই, ভাতা নেই। সরকারি নির্দেশ সত্ত্বেও কাজ হচ্ছে না। এক প্রকার বাধ্য হয়েই এই প্রতিবাদ।” বিজেপি নেতা দিলীপ ঘোষ তোপ দেগে ছিলেন সরাসরি মুখ্যমন্ত্রীর দিকে। বলেছিলেন মাননীয়া নর্দমার জলে টেনে নামালেন মাষ্টারমশাইদের। সরস্বতী পুজোর সকালের এই ঘটনায় হকচকিয়ে গিয়েছে প্রশাসন। কোনভাবেই কেউ প্রস্তুত ছিলেন না এই ঘটনার জন্যে।
এই ঘটনার জেরেই আজ বুধবার তৎপরতার সঙ্গে বাড়ানো হলো মুখ্যমন্ত্রীর বাড়ি সংলগ্ন এলাকার নিরাপত্তা। আদি গঙ্গার বুকে ২৪ ঘণ্টা ধরে টহল দেবে নৌকা। চারপাশ ঘিরে ফেলা হয়েছে। এলাকা জুড়ে আরো জোরদার হবে নিরাপত্তা ব্যবস্থা। আদিগঙ্গার পাড়ে মোট ৭ জায়গায় পুলিশ পিকেটিং করা হয়েছে। নৌকোয় করে কর্মীরা নজরদারি রাখবেন চারপাশের। পাশাপশি জেল সংলগ্ন ওয়াচ টাওয়ার থেকেও চলবে নজরদারি।