নয়াদিল্লি: সমকামী সম্পর্ক ভারতীয় সংস্কৃতির পরিপন্থী, এমন যুক্তি দেখিয়ে বৃহস্পতিবার (Thurssday) দিল্লি হাইকোর্টে (Delhi High Court) হলফনামা দিয়ে সমকামী বিবাহের বিরোধিতা করল কেন্দ্রীয় সরকার (Central Govt)। উল্লেখ করা হল, বিয়ে না করে প্রেমিক-প্রেমিকার একসঙ্গে থাকাও ভারতীয় ‘পরিবার ধারণা’র সঙ্গে খাপ খায় না।
দীর্ঘদিনের এই মামলায়, ৩৭৭ ধারা-উত্তর ভারতে, সমকামী বিবাহকে স্বীকৃতি দেওয়া ও বৈধ করার আর্জি জানানো হয়েছিল। আবেদনকারীদের দাবি ছিল, ইচ্ছুক সমকামীদের বিবাহের অধিকার থেকে বঞ্চিত করা আসলে সংবিধানের মৌলিক অধিকারকে খর্ব করা। দিল্লি হাইকোর্ট এই বিষয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের মত জানতে চেয়ে বারবার নোটিস পাঠানো হয়। তবে কোন সদুত্তর আসেনি। বৃহস্পতিবার অবশেষে সরকারের তরফে বলা হয়েছে, ৩৭৭ ধারা বাতিলের অর্থ এই নয় যে সমকামী বিবাহ বৈধতা পাবে।
উল্লেক্ষ, তিন বছর আগে দেশের সর্বোচ্চ আদালত ৩৭৭ ধারা বাতিল করে জানায় সমকামী যুগলের একসঙ্গে থাকা আর দণ্ডনীয় অপরাধ নয়। সম্মতিক্রমে সমকামী সম্পর্ক অপরাধমূলক আচরণ নয়, সে কথা বলা হয়েছিল তখনই। কিন্তু এ দিন সরকারের তরফে বলা হয়েছে, ভারতীয় সংস্কৃতিতে এ ধরনের বিয়ের জায়গা নেই। ভারতবর্ষে বিবাহের অধিকারী শুধু এক জন ‘জন্মগত পুরুষ’ এবং ‘জন্মগত নারী’-র মধ্যেই থাকতে পারে। কারণ, সে দাম্পত্যের ফলে সন্তান আসে। সমকামীদের মধ্যে বিয়ে হলে সন্তান আসে না। তাই এই বিয়েকে বৈধতা দেওয়া যাবে না। একই কথা বলা হয়েছে ‘লিভ ইন’ প্রসঙ্গেও। হলফনামায় বলা হয়, ভারতীয় পরিবারের ধারণা বাবা-মা এবং সন্তানদের নিয়ে। সেখানে বিয়ে না করে একসঙ্গে থাকার মতো সম্পর্কের কোনও জায়গা এই পরিবারের ছবির মধ্যে নেই।
এরপরই আবার উল্লেখ করা হয়, ভারতীয় সমাজে বিয়ে বহু প্রাচীন একটি রীতি, সংস্কৃতি, অভ্যাস, সামাজিক মূল্যবোধ। সুপ্রিম কোর্ট ৩৭৭ ধারায় সমলিঙ্গের মানুষের মধ্যের সম্পর্ককে ‘অপরাধ’ না বললেও একই লিঙ্গের মানুষের মধ্যে বিয়েতে সম্মতি দেয়নি। সমলিঙ্গের দু’জন মানুষ ভালবেসে একসঙ্গে বাস করলেও ভারতীয় সমাজ ব্যবস্থায় ‘স্বামী-স্ত্রী-সন্তান’-এর যে পারিবারিক কাঠামো রয়েছে। তাই সমলিঙ্গের বাস কখনও তার সমতুল্য হতে পারে না। দেশের অধিকাংশ মানুষের কাছে বিয়ে এখনও পবিত্র একটি সম্পর্ক বলে মনে করা হয়। এমনটাই বলে আদালতে জানায় কেন্দ্র।
মনোবিদ ডা. কবিতা অরোরা এবং থেরাপিস্ট অঙ্কিতা খান্না, আদালতের কাছে নিজের পছন্দের সঙ্গী বেছে তাঁর সঙ্গে থাকার আরজি জানিয়ে আদালতে মামলা দায়ের করেন। দিল্লির কালকাজির বিবাহনিবন্ধীকরণ অফিস তাঁদের বিশেষ বিবাহ আইনে বিয়ে করার অনুমতি না দেওয়ার পরই আদালতের দ্বারস্থ হন। আরও কিছু আরজি জমা পড়ে একই বিষয়ে। সেই মামলার শুনানিতেই এই বক্তব্য জানিয়েছে কেন্দ্র। ২০ এপ্রিল মামলার পরবর্তী দিন হিসেবে ধার্য করা হয়েছে।